স্টাফ রিপোর্টার॥ বাংলাদেশ সনাতন জাগরণ মঞ্চের কেন্দ্রীয় কমিটির মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারী বলেছেন আমরা এদেশের সন্তান, এই দেশ ছেড়ে কোথাও যাব না। গত ৫ আগস্ট দেশের বৈষম্য দূর করতে শহীদ হয়েছে আবু সাঈদ,মুগ্ধরা। তাদের আত্মত্যাগের বিনিয়য়ে দেশ কি বৈষম্যমুক্ত হয়েছে। দেশে এখনো বৈষম্য রয়ে গেছে। সব চেয়ে বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন হিন্দুরা। দেশব্যাপী হিন্দু নির্যাতন, নিপীড়ন ও মঠ-মন্দিরে হামলার প্রতিবাদ এবং ৮ দফা দাবি আদায়ের লক্ষ্যে শুক্রবার বিকেলে মাহিগঞ্জ কলেজ মাঠে বাংলাদেশ সনাতন জাগরণ মঞ্চের রংপুরে বিভাগীয় সমাবেশ প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। তিনি বলেন একাত্তুরে দেশ স্বাধীনের আন্দোলনে যারা ভারতে পালিয়ে জীবন রক্ষা করেছিলেন তাদের ৭০ শতাংশই হিন্দু। তাদের বাড়ি-ঘর লুটপাট সম্পত্তি দখল করা হয়েছে। স্বাধীনতার এত বছর পরেও ওই ধারা অব্যাহত রয়েছে। তিনি মাওলানা ভাসানি, শেরে বাংলা একে ফজলুল হক, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, জিয়াউর রহমানসহ সকল দেশ প্রেমিকের মূল্যায়ন দাবি করে বলেন, ৫ আগস্টের পর কারাগার থেকে সন্ত্রাসি, রাজনীতিবিদ,জঙ্গিরা মুক্তি পেয়েছে। কিন্তু কোন হিন্দু মুক্তি পাননি। তিনি সংবিধানের মূল ৪ নীতি ঠিক রাখার দাবি জানিয়ে বলেন হিন্দুরা কোন রাজনৈতিক দলের সমর্থক নয়। আগামীতে যে দল গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া ঠিক রাখতে পারবে সনাতনিরা সেই দলকে ভোট দিবেন। তিন কোটি সনাতনী আজ ঐক্যবন্ধ। তিনি চট্টগ্রামে সনাতন ধর্মের লোকদের ওপর নির্ডাতনের প্রসঙ্গ তুলে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনুসের দৃষ্ঠি আকর্ষন করে বলেন আমাদের ৮ দফা দাবি মেনে নিন। কোন কোন পক্ষের নই। তিনি বলেন, ৫ আগস্টের পর অনেক কিছুর পরিবর্তন হয়েছে, আন্দোলনের কারণে পরীক্ষা ছাড়াই পাশ মেলছে, আন্দোলনে অনেক বিষয়ে স্বীকৃতি মিললেও তিন মাস হয়ে গেলো আমাদের বিষয়ে কোন সমাধান হয়নি। বরং এখনও হিন্দুদের বাড়িঘর লুট করা হচ্ছে, হিন্দুদের চাকুরী যাচ্ছে। যা কষ্টদায়ক। তাই বলতে চাই, সনাতনীদের এ দেশ থেকে উৎখাতের চেষ্টা হলে পরিণতি ভালো হবে না। সনাতনী ধর্মের সকল সংগঠন আজ ঐক্যবদ্ধ, তাই দেখে অনেকে ঈর্ষাণিত হয়ে সমাবেশে আসতে বাধা প্রদান করছেন।
তিনি সমাবেশ লোকজন আসতে বাধা দেয়া হয়েছে এমন অভিযোগ করে বলেন, দিনাজপুর- নীফফামারি থেকে আমাদের লোককে আসতে দেয়া হয়নি। বস চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে। সমাবেশে আসার সময় কতিপয় লোক দ্বারা সনাতনীদের ওপর হামলার অভিযোগ করেন তিনি। আহত একজনকে মঞ্চে ্এনে তাকে দিখিয়ে বলেন আমরা নির্যাতনের শিকার হচ্ছি এটাই তারপ্রমান।
এ কর্মসূচি ঘিরে বিভাগের হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা বেশ কয়েকদিন থেকে নানা প্রস্তুতি নিয়েছিল। প্রথমে জিলা স্কুল মাঠে সমাবেশ করার কথা থাকলেও অনুমতি না পাওয়ায় মাহিগঞ্জ কলেজ মাঠে দুপুর ২টায় এ সমাবেশ শুরু হয়। সমাবেশ অংশ গ্রহণ করতে রংপুর বিভাগের বিভিন্ন জেলা থেকে ষনাতন ধর্মলম্বলীরা আসতে শুরু করে সকাল থেকে। অনেকেই একদিন আগে এসেছেন। তবে সনাতন ধর্মীদের অভিযোগ দিনাজপুরসহ কয়েকটি রুটে বাস চলাচল বন্ধ করে দেয়া হয়। ফলে অনেকে অটো রিক্সাসহ বিভিন্ন মাধ্যমে সমাবেশ আসেন। দুুপুরে সনাতন ধর্মের একদল লোক সমাবেশ আসার সময় কাউনিয়া হামলার শিকার হন। এতে বেশ কয়েকজন আহত হন। আহতদের মধ্যে দুই জনের নাম পাওয়া গেছে, তারা হলেন, লালমনির হাটের লালমোহন কুড়িগ্রাম রাজারহাটের স্বপন কর্মকার। শুক্রবার দুপুরে সমাবেশে যোগ দিতে যাওয়ার সময় একদল লোক কাউনিয়া বাসষ্টান্ডের নিকট তাদের বাধা ও মারপিট করেন। আহতদের প্রথমে কাউনিয়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ও পরে তাদের রংপুর হাসপাতালে প্রেরন করা হয়। এবিষয়ে কাউনিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার মহিদুল হক বলেন একটি ঘটনা ঘটেছে। বিস্তারিত কিছু জানিনা। ওসি সাথে যোগাযোগ করেন। ওসির সাথে একাধিকবার মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোন দরেননি।
সমাবেশে জাতীয় হিন্দু মহাজোট ও সংখ্যালঘু মোর্চাসহ অন্যান্য সকল হিন্দু সংগঠনের নেতাকর্মীরাও অংশ নেন । সমাবেশে বাংলাদেশ সনাতন জাগরণ মঞ্চের কেন্দ্রীয় কমিটির মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারী ছাড়াও বক্তব্য রাখেন সনাতনী বিদ্যার্থী সংসদের প্রতিষ্ঠাতা বরণ কুশল চক্রবর্তী, চট্টগ্রামের গিরি আশ্রমের অধ্যক্ষ স্বামী ওমেশানন্দ গিরি মহারাজ, বাংলাদেশ সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের স্বামী বিপ্রানন্দ জী ও শ্রী শ্রী গোপীনাথ ব্রহ্মচারীসহ বিভাগীয় ও স্থানীয় পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ। বাংলাদেশ সনাতন জাগরণ মঞ্চের ৮ দফা দাবীসমূহ হলো- সংখ্যালঘু নির্যাতনের বিচারের জন্য দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল গঠন করে দোষীদের উপযুক্ত শাস্তি প্রদান, ক্ষতিগ্রস্তদের উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ ও পুনর্বাসন, অবিলম্বে সংখ্যালঘু সুরক্ষা আইন প্রণয়ন, সংখ্যালঘু বিষয়ক মন্ত্রণালয় গঠন, হিন্দু ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্টকে ‘হিন্দু ফাউন্ডেশন’-এ উন্নীত করাসহ বৌদ্ধ ও খ্রিস্টান ধর্মীয় ট্রাস্টকেও ফাউন্ডেশনে রূপান্তর, ‘দেবোত্তর সম্পত্তি পুনরুদ্ধার ও সংরক্ষণ আইন’ প্রণয়ন এবং ‘অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যর্পন আইন’-এর যথাযথ বাস্তবায়ন, সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ও বিশ্ববিদ্যালয় কলেজগুলোতে সংখ্যালঘু শিক্ষার্থীদের জন্য উপাসনালয় নির্মাণ ও প্রতিটি হোস্টেলে প্রার্থনা কক্ষ বরাদ্দ করা, ‘সংস্কৃত ও পালি শিক্ষাবোর্ড’ আধুনিকায়ন এবং দুর্গাপূজায় ৫ দিন ছুটিসহ প্রতিটি সম্প্রদায়ের ধর্মীয় উৎসবে প্রয়োজনীয় ছুটির ব্যবস্থা করা।