3:27 pm, Saturday, 23 November 2024

আখেরি মোনাজাতে শেষ হলো ঠাকুরগাঁওয়ের ইজতেমা

  • Reporter Name
  • Update Time : 07:00:29 am, Sunday, 6 October 2024
  • 12 Time View

রাণীশংকৈল  (ঠাকুরগাঁও) প্রতিনিধি॥ ঘড়ির কাটায় বেলা সাড়ে ১১টা। সম্মিলিত কণ্ঠে আমিন, আমিন ধ্বনিতে মুখরিত হয়ে উঠেছে ইজতেমা মাঠ। সর্বস্তরের মানুষ অশ্রুসিক্ত নয়নে আল্লাহ তা’আলার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করেছেন। মোনাজাতে নিজেদের হৃদয়ের আবেগ-অনুভূতি আল্লাহর কাছে তুলে ধরেছেন। আমিন, আমিন ধ্বনি আর চোখের পানিতে বুক ভাসিয়েছেন মুসল্লিরা। আর থেমে থেমে কান্নার আওয়াজে ছিল মুসলিম জাহানের সুখ, শান্তি সমৃদ্ধিসহ আল্লাহ তা’আলার রহমত ও পাপাচার থেকে ক্ষমা প্রার্থনার আকুতি জানান।

শনিবার মহান সৃষ্টিকর্তার কাছে চোখের জলে নিজেদের পাপমুক্তি কামনায় আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে শেষ হলো ঠাকুরগাঁও শহরের গোবিন্দনগর রুহিয়া রোডের পাশে লাল মেম্বারের ইটভাটা মাঠে জেলা তাবলীগ জামাতের সূরাহ সদস্যদের আয়োজিত তিন দিনব্যাপী ইজতেমা। এতে অংশ নেয় হাজারো মুসল্লি।

মোনাজাত পরিচালনা করেন রাজধানীর কাকরাইল মসজিদের মুকিম মাওলানা মোহাম্মদ উল্লাহ। এর আগে, বৃহস্পতিবার ফজরের নামাজের পর আম বয়ান শুরু হয়। আখেরি মোনাজাতে অংশ নিতে আগের দিন রাত থেকেই ঠাকুরগাঁও জেলাসহ বিভিন্ন এলাকার তাবলিগ জামাতের অনুসারীরা ও ইন্দোনেশিয়ার আট জন এবং ঢাকার কাকরাইল থেকে মাওলানা মুহাম্মদ উল্লাহ পরিচালনায় ১২জন প্রতিনিধি ইজতেমাস্থলে পৌঁছান। এ ছাড়া ভোর থেকে পিকআপ ভ্যান, থ্রি-হুইলার অটোরিকশা, কার-মাইক্রোবাসা, মোটরসাইকেলে যে যেভাবে পারেন ছোটেন ইজতেমাস্থলের দিকে। ইজতেমা মাঠের জনস্রোত ছড়িয়ে পড়ে মাঠের বাইরেও।

ঠাকুরগাঁও পৌরসভার ১২টি ওয়ার্ডসহ সদর উপজেলার ২২ ইউনিয়ন ও ৫টি উপজেলার তাবলিগ জামাতের অনুসারীসহ বিভিন্ন এলাকার ধর্মপ্রাণ মানুষ এতে অংশ নেন। মোনাজাতের সময় অনেককে মাঠের আশপাশের রাস্তা, অলি-গলি, বিভিন্ন বাসা-বাড়ি, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ও ভবনের ছাদে অবস্থান করতে দেখা গেছে। আখেরি মোনাজাতে মুসল্লিদের আসা-যাওয়া নিরাপদ করতে সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থানে ছিল আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা।

ইজতেমা আয়োজক কমিটির সদস্যরা জানান, বিশ্ব ইজতেমার ওপর চাপ কমাতে জেলা ভিত্তিক আঞ্চলিক ইজতেমা হয়ে আসছে। এরই ধারাবাহিকতায় ঠাকুরগাঁওয়ে অনুষ্ঠিত হলো এ ইজতেমা। গত বৃহস্পতিবার বাদ ফজর বয়ানের মধ্য দিয়ে শুরু হয় ইজতেমার কার্যক্রম। কোরআন ও হাদিসের উদ্ধৃতি দিয়ে আল্লাহ ও নবী-রাসুলের হুকুম-আহকাম মেনে চলার মধ্যেই ইহকাল ও পরকালে সুখ-শান্তি রয়েছে এমন আলোচনা করা হয়।

তারা আরও জানান, ইজতেমায় রাজধানী ঢাকা ছাড়াও ইন্দোনেশিয়ার তাবলিগের জামাতের বিদেশি মেহমান ও মুরব্বিরা অংশ নেন। তাঁরা তিন দিনের এই ইজতেমায় ইমান-আমলের বয়ানের মাধ্যমে দ্বীনের দাওয়াতে উদ্বুদ্ধ করেন।

এদিকে শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ইজতেমা সম্পন্ন হয়েছে বলে জানান ঠাকুরগাঁওয়ের পুলিশ সুপার শেখ জাহিদুল ইসলাম। তিনি বলেন, ইজতেমা আয়োজকদের সঙ্গে কথা বলে কয়েক স্তরের নিরাপত্তাবলয় তৈরি করা হয়েছিল। যেকোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা, বিশৃঙ্খলা এড়াতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা সার্বক্ষণিক সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থায় ছিলেন। সবার সহযোগিতায় সুন্দর, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে ইজতেমা শেষ হয়েছে। সন্তুষ্টি লাভের আশায় হাজারো মানুষ আল্লাহর কাছে আর্জি জানান। অনেকে কেঁদে কেঁদে মহান আল্লাহর কাছে ক্ষমা চান। বিশ্ব শান্তির জন্য দোয়া করেন।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

আখেরি মোনাজাতে শেষ হলো ঠাকুরগাঁওয়ের ইজতেমা

Update Time : 07:00:29 am, Sunday, 6 October 2024

রাণীশংকৈল  (ঠাকুরগাঁও) প্রতিনিধি॥ ঘড়ির কাটায় বেলা সাড়ে ১১টা। সম্মিলিত কণ্ঠে আমিন, আমিন ধ্বনিতে মুখরিত হয়ে উঠেছে ইজতেমা মাঠ। সর্বস্তরের মানুষ অশ্রুসিক্ত নয়নে আল্লাহ তা’আলার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করেছেন। মোনাজাতে নিজেদের হৃদয়ের আবেগ-অনুভূতি আল্লাহর কাছে তুলে ধরেছেন। আমিন, আমিন ধ্বনি আর চোখের পানিতে বুক ভাসিয়েছেন মুসল্লিরা। আর থেমে থেমে কান্নার আওয়াজে ছিল মুসলিম জাহানের সুখ, শান্তি সমৃদ্ধিসহ আল্লাহ তা’আলার রহমত ও পাপাচার থেকে ক্ষমা প্রার্থনার আকুতি জানান।

শনিবার মহান সৃষ্টিকর্তার কাছে চোখের জলে নিজেদের পাপমুক্তি কামনায় আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে শেষ হলো ঠাকুরগাঁও শহরের গোবিন্দনগর রুহিয়া রোডের পাশে লাল মেম্বারের ইটভাটা মাঠে জেলা তাবলীগ জামাতের সূরাহ সদস্যদের আয়োজিত তিন দিনব্যাপী ইজতেমা। এতে অংশ নেয় হাজারো মুসল্লি।

মোনাজাত পরিচালনা করেন রাজধানীর কাকরাইল মসজিদের মুকিম মাওলানা মোহাম্মদ উল্লাহ। এর আগে, বৃহস্পতিবার ফজরের নামাজের পর আম বয়ান শুরু হয়। আখেরি মোনাজাতে অংশ নিতে আগের দিন রাত থেকেই ঠাকুরগাঁও জেলাসহ বিভিন্ন এলাকার তাবলিগ জামাতের অনুসারীরা ও ইন্দোনেশিয়ার আট জন এবং ঢাকার কাকরাইল থেকে মাওলানা মুহাম্মদ উল্লাহ পরিচালনায় ১২জন প্রতিনিধি ইজতেমাস্থলে পৌঁছান। এ ছাড়া ভোর থেকে পিকআপ ভ্যান, থ্রি-হুইলার অটোরিকশা, কার-মাইক্রোবাসা, মোটরসাইকেলে যে যেভাবে পারেন ছোটেন ইজতেমাস্থলের দিকে। ইজতেমা মাঠের জনস্রোত ছড়িয়ে পড়ে মাঠের বাইরেও।

ঠাকুরগাঁও পৌরসভার ১২টি ওয়ার্ডসহ সদর উপজেলার ২২ ইউনিয়ন ও ৫টি উপজেলার তাবলিগ জামাতের অনুসারীসহ বিভিন্ন এলাকার ধর্মপ্রাণ মানুষ এতে অংশ নেন। মোনাজাতের সময় অনেককে মাঠের আশপাশের রাস্তা, অলি-গলি, বিভিন্ন বাসা-বাড়ি, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ও ভবনের ছাদে অবস্থান করতে দেখা গেছে। আখেরি মোনাজাতে মুসল্লিদের আসা-যাওয়া নিরাপদ করতে সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থানে ছিল আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা।

ইজতেমা আয়োজক কমিটির সদস্যরা জানান, বিশ্ব ইজতেমার ওপর চাপ কমাতে জেলা ভিত্তিক আঞ্চলিক ইজতেমা হয়ে আসছে। এরই ধারাবাহিকতায় ঠাকুরগাঁওয়ে অনুষ্ঠিত হলো এ ইজতেমা। গত বৃহস্পতিবার বাদ ফজর বয়ানের মধ্য দিয়ে শুরু হয় ইজতেমার কার্যক্রম। কোরআন ও হাদিসের উদ্ধৃতি দিয়ে আল্লাহ ও নবী-রাসুলের হুকুম-আহকাম মেনে চলার মধ্যেই ইহকাল ও পরকালে সুখ-শান্তি রয়েছে এমন আলোচনা করা হয়।

তারা আরও জানান, ইজতেমায় রাজধানী ঢাকা ছাড়াও ইন্দোনেশিয়ার তাবলিগের জামাতের বিদেশি মেহমান ও মুরব্বিরা অংশ নেন। তাঁরা তিন দিনের এই ইজতেমায় ইমান-আমলের বয়ানের মাধ্যমে দ্বীনের দাওয়াতে উদ্বুদ্ধ করেন।

এদিকে শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ইজতেমা সম্পন্ন হয়েছে বলে জানান ঠাকুরগাঁওয়ের পুলিশ সুপার শেখ জাহিদুল ইসলাম। তিনি বলেন, ইজতেমা আয়োজকদের সঙ্গে কথা বলে কয়েক স্তরের নিরাপত্তাবলয় তৈরি করা হয়েছিল। যেকোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা, বিশৃঙ্খলা এড়াতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা সার্বক্ষণিক সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থায় ছিলেন। সবার সহযোগিতায় সুন্দর, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে ইজতেমা শেষ হয়েছে। সন্তুষ্টি লাভের আশায় হাজারো মানুষ আল্লাহর কাছে আর্জি জানান। অনেকে কেঁদে কেঁদে মহান আল্লাহর কাছে ক্ষমা চান। বিশ্ব শান্তির জন্য দোয়া করেন।