3:43 pm, Thursday, 21 November 2024

রক্তচাপ ও হার্ট-অ্যাটাকের ঝুঁকি কমাতে করণীয়

  • Reporter Name
  • Update Time : 07:12:21 am, Thursday, 12 September 2024
  • 13 Time View

গ্রাম বাংলার অতি পরিচিতি একটি ফল ডালিম। বাংলাদেশের সর্বত্রই প্রতিটি বসত বাড়ির আঙ্গিনায় ডালিম গাছ দেখা যায়। ছোট আকারের গাছটির ফলের নাম ডালিম। এ ফলকে কোনো কোনো অঞ্চলে বেদানা আবার কেউ আনারও বলে। এ ফলটি সারা বছরই পাওয়া যায়। এটি বাংলাদেশের মধ্যে রাজশাহী, চাপাইনবাবগঞ্জ, নাটোর, দিনাজপুর, ঠাকুরগাঁও এবং রংপুর জেলায় ডালিম বেশি উৎপন্ন হয়। সব বয়সের সব মানুষের জন্য ডালিম খুবই উপকারী। গোলাকৃতির ফলটির বাকল ছাড়ালে ভিতরে লালচে রসে ভরা দানাগুলো খাওয়া হয়। শরীর সুস্থ ও সুন্দর রাখতে ডালিমের গুণের শেষ নেই। ফল, গাছের পাতা, ছাল, মূল সবই ঔষধি হিসেবে ব্যবহার করা হয়। অত্যন্ত পুষ্টি সমৃদ্ধ ফল ডালিম। এতে ভিটামিন বি, সি, শর্করা, ক্যালসিয়াম, ফসফরাস প্রচুর পরিমাণে পাওয়া যায়। ফলটি কৈাষ্ঠ্যকাঠিন্য, আমাশয়, পেটের অসুখ, শ্বাসকষ্ট, কাশি ও বাত ব্যাধিতে খুবই উপকার সাধন করে। ডালিমের রস মেধা ও রক্ত বৃদ্ধি করে এবং বুকের ব্যথা ও বুক ধড়ফড়ানি সেরে যায়। ডালিমের রস জন্ডিস রোগে বেশ কার্যকর। তাছাড়া মুখের অরুচি দূরে করে খাওয়ার রুচি বাড়ায়। কণ্ঠস্বর পরিষ্কার করে। হার্টের জন্য ডালিম খুবই উপকারী।

রাসায়নিক উপাদান : পাতায় থাকে বেটুলিক এবং আরসোলিক এসিড, বিটা সিটোস্টেরল। কাণ্ডের বাকলে থাকে : ডি ম্যানিটল, অক্সিম, ফ্রিয়েডেলিন, পেলিটিয়েরিন। ফলের পেরিকার্পে (বাকলে) থাকে : ট্যানিন, এলাজিক, সাইট্রিক অ্যাসিড এবং আরসোলিক এসিড। মূলে থাকে : পেলিটিয়েরিন, সিউডো, পেলিটিয়েরিন, আইসোপেলিটিয়েরিন, মিথাইল, পেরিটিয়েরিন।

প্রতি ১০০ গ্রাম খাবার উপযোগী ডালিমে খাদ্য উপাদান নিম্নরূপ : খাদ্যশক্তি ৬৫ কিলোক্যালরি, শর্করা ১৪.৫ গ্রাম, ক্যালসিয়াম ১০ মিলিগ্রাম, ভিটামিন সি ১৪ মিলিগ্রাম, ফসফরাস ৭০ মিলিগ্রাম, প্রোটিন ১.৬ মিলিগ্রাম, চর্বি ০.১ মিলিগ্রাম, আয়রন ০.৩ মিলিগ্রাম, ভিটামিন বি-১ ০.০৬ মিলিগ্রাম, বি-২ ০.১ মিলিগ্রাম, নিয়াসিন ০.৩ মিলিগ্রাম। এফলটি দাঁত ও হাড়ের জন্য বেশ উপকারি। ভিটামিন সি থাকার ফলটি চামড়ার সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে তাই চর্ম রোগ প্রতিরোধ ও চুলের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে। তাছাড়া নানা ঔষধি গুণাগুণ রয়েছে তা নিম্নরূপ :

* জ¦র হলে ডালিমের রস চিবিয়ে খান শরীরের তাপ কমে আসবে। কামি থাকলে কফ ও পেটের বায়ু নাশ হবে।

* যারা হৃদরোগে বা হার্টের দুর্বলতায় ভোগছেন তারা ৩/৪ চামচ ডালিমের রসের সাথে ২ চা-চামচ ঘৃতকুমারী শাঁস মিশিয়ে খান খুবই উপকার পাবেন। তাছাড়া যাদের রাতে ঘুম কম হয় তাদেরও উপকার আসবে।

* যে সব স্ত্রী লোকের ঘনঘন গর্ভস্রাব হয় তারা সন্তান জন্ম দিতে পারে না। এসব মহিলারা ডালিম গাছের পাতা বেটে এক চা চামচ রস নিয়ে তাতে শ্বেত-চন্দনের আধা চা-চামচ ও কয়েক ফোঁটা মধু মিশিয়ে তাতে অল্প পরিমাণে দই নিয়ে ভালো করে ফুটিয়ে খেলে গর্ভস্রাব বন্ধ হতে পারে।

* যাদের পেটে খাবার হজমে সমস্যা হয় তারা ৩-৪ চা-চামচ ডালিমের রস নিয়ে তাতে পুরাতন আখের গুড় মিশিয়ে দিনে ২ বার খান। অম্লজনিত অজীর্ণ আরোগ্য হবে।

* শিশুদের লিভার বড় হয়ে গেলে তাতে ডালিম গাছের মূলের শুকনা ছাল গুড়ো করে ২-৩ চা-চামচ নিয়ে তাতে ২ চামচ দুধ ও সামান্য মধু মিশিয়ে খাওয়ান। উপকার পাবেন।

* ডালিমে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টি অক্সিডেন্ট থাকে যা রক্তের কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।

* চামড়ার ক্যান্সার প্রতিরোধ করে ডালিম বিশেষ ভূমিকা পালন করে।

* বমি বমি ভাব থাকলে ডালিমের রস ও মধু মিশিয়ে খান উপকার পাবেন।

* যারা বহু দিন ধরে আমাশয়ে ভুগছেন তারা ডালিম গাছের ছাল ও ডালিমের খোসা লবঙ্গের (লং) এর সাথে ফুটিয়ে সেই পানি কয়েকদিন খান। খুবই উপকার পাবেন। তাছাড়া কৃমি মরে যাবে। বলবৃদ্ধি পাবে, পেটের অসুখের বিশেষ উপকার হবে।

* যারা ডায়াবেটিসে ভোগছেন তারা ফলের খোসা থেঁতো করে পানিতে ভিজিয়ে রাখুন। কালো পানি বের হবে। সেই পানি ছেকে প্রতিদিন সকালে খান ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে আসবে।

* যাদের নাক দিয়ে পানি পড়ে তারা ডালিমের রসের সাথে দুর্বাঘাসের রস মিশিয়ে খান। উপকার পাবেন।

সতর্কতা : বেশি পরিমাণে শিকড়ের রস খেলে বিষক্রিয়া হতে পারে। এই উপকারী গাছটি বাড়ির আশে-পাশে লাগান যত্ন নিন। পরিবারের পুষ্টি চাহিদা পূরণে এগিয়ে আসুন।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

মমতাজ শিরীন ভরসার শোক প্রকাশ

রক্তচাপ ও হার্ট-অ্যাটাকের ঝুঁকি কমাতে করণীয়

Update Time : 07:12:21 am, Thursday, 12 September 2024

গ্রাম বাংলার অতি পরিচিতি একটি ফল ডালিম। বাংলাদেশের সর্বত্রই প্রতিটি বসত বাড়ির আঙ্গিনায় ডালিম গাছ দেখা যায়। ছোট আকারের গাছটির ফলের নাম ডালিম। এ ফলকে কোনো কোনো অঞ্চলে বেদানা আবার কেউ আনারও বলে। এ ফলটি সারা বছরই পাওয়া যায়। এটি বাংলাদেশের মধ্যে রাজশাহী, চাপাইনবাবগঞ্জ, নাটোর, দিনাজপুর, ঠাকুরগাঁও এবং রংপুর জেলায় ডালিম বেশি উৎপন্ন হয়। সব বয়সের সব মানুষের জন্য ডালিম খুবই উপকারী। গোলাকৃতির ফলটির বাকল ছাড়ালে ভিতরে লালচে রসে ভরা দানাগুলো খাওয়া হয়। শরীর সুস্থ ও সুন্দর রাখতে ডালিমের গুণের শেষ নেই। ফল, গাছের পাতা, ছাল, মূল সবই ঔষধি হিসেবে ব্যবহার করা হয়। অত্যন্ত পুষ্টি সমৃদ্ধ ফল ডালিম। এতে ভিটামিন বি, সি, শর্করা, ক্যালসিয়াম, ফসফরাস প্রচুর পরিমাণে পাওয়া যায়। ফলটি কৈাষ্ঠ্যকাঠিন্য, আমাশয়, পেটের অসুখ, শ্বাসকষ্ট, কাশি ও বাত ব্যাধিতে খুবই উপকার সাধন করে। ডালিমের রস মেধা ও রক্ত বৃদ্ধি করে এবং বুকের ব্যথা ও বুক ধড়ফড়ানি সেরে যায়। ডালিমের রস জন্ডিস রোগে বেশ কার্যকর। তাছাড়া মুখের অরুচি দূরে করে খাওয়ার রুচি বাড়ায়। কণ্ঠস্বর পরিষ্কার করে। হার্টের জন্য ডালিম খুবই উপকারী।

রাসায়নিক উপাদান : পাতায় থাকে বেটুলিক এবং আরসোলিক এসিড, বিটা সিটোস্টেরল। কাণ্ডের বাকলে থাকে : ডি ম্যানিটল, অক্সিম, ফ্রিয়েডেলিন, পেলিটিয়েরিন। ফলের পেরিকার্পে (বাকলে) থাকে : ট্যানিন, এলাজিক, সাইট্রিক অ্যাসিড এবং আরসোলিক এসিড। মূলে থাকে : পেলিটিয়েরিন, সিউডো, পেলিটিয়েরিন, আইসোপেলিটিয়েরিন, মিথাইল, পেরিটিয়েরিন।

প্রতি ১০০ গ্রাম খাবার উপযোগী ডালিমে খাদ্য উপাদান নিম্নরূপ : খাদ্যশক্তি ৬৫ কিলোক্যালরি, শর্করা ১৪.৫ গ্রাম, ক্যালসিয়াম ১০ মিলিগ্রাম, ভিটামিন সি ১৪ মিলিগ্রাম, ফসফরাস ৭০ মিলিগ্রাম, প্রোটিন ১.৬ মিলিগ্রাম, চর্বি ০.১ মিলিগ্রাম, আয়রন ০.৩ মিলিগ্রাম, ভিটামিন বি-১ ০.০৬ মিলিগ্রাম, বি-২ ০.১ মিলিগ্রাম, নিয়াসিন ০.৩ মিলিগ্রাম। এফলটি দাঁত ও হাড়ের জন্য বেশ উপকারি। ভিটামিন সি থাকার ফলটি চামড়ার সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে তাই চর্ম রোগ প্রতিরোধ ও চুলের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে। তাছাড়া নানা ঔষধি গুণাগুণ রয়েছে তা নিম্নরূপ :

* জ¦র হলে ডালিমের রস চিবিয়ে খান শরীরের তাপ কমে আসবে। কামি থাকলে কফ ও পেটের বায়ু নাশ হবে।

* যারা হৃদরোগে বা হার্টের দুর্বলতায় ভোগছেন তারা ৩/৪ চামচ ডালিমের রসের সাথে ২ চা-চামচ ঘৃতকুমারী শাঁস মিশিয়ে খান খুবই উপকার পাবেন। তাছাড়া যাদের রাতে ঘুম কম হয় তাদেরও উপকার আসবে।

* যে সব স্ত্রী লোকের ঘনঘন গর্ভস্রাব হয় তারা সন্তান জন্ম দিতে পারে না। এসব মহিলারা ডালিম গাছের পাতা বেটে এক চা চামচ রস নিয়ে তাতে শ্বেত-চন্দনের আধা চা-চামচ ও কয়েক ফোঁটা মধু মিশিয়ে তাতে অল্প পরিমাণে দই নিয়ে ভালো করে ফুটিয়ে খেলে গর্ভস্রাব বন্ধ হতে পারে।

* যাদের পেটে খাবার হজমে সমস্যা হয় তারা ৩-৪ চা-চামচ ডালিমের রস নিয়ে তাতে পুরাতন আখের গুড় মিশিয়ে দিনে ২ বার খান। অম্লজনিত অজীর্ণ আরোগ্য হবে।

* শিশুদের লিভার বড় হয়ে গেলে তাতে ডালিম গাছের মূলের শুকনা ছাল গুড়ো করে ২-৩ চা-চামচ নিয়ে তাতে ২ চামচ দুধ ও সামান্য মধু মিশিয়ে খাওয়ান। উপকার পাবেন।

* ডালিমে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টি অক্সিডেন্ট থাকে যা রক্তের কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।

* চামড়ার ক্যান্সার প্রতিরোধ করে ডালিম বিশেষ ভূমিকা পালন করে।

* বমি বমি ভাব থাকলে ডালিমের রস ও মধু মিশিয়ে খান উপকার পাবেন।

* যারা বহু দিন ধরে আমাশয়ে ভুগছেন তারা ডালিম গাছের ছাল ও ডালিমের খোসা লবঙ্গের (লং) এর সাথে ফুটিয়ে সেই পানি কয়েকদিন খান। খুবই উপকার পাবেন। তাছাড়া কৃমি মরে যাবে। বলবৃদ্ধি পাবে, পেটের অসুখের বিশেষ উপকার হবে।

* যারা ডায়াবেটিসে ভোগছেন তারা ফলের খোসা থেঁতো করে পানিতে ভিজিয়ে রাখুন। কালো পানি বের হবে। সেই পানি ছেকে প্রতিদিন সকালে খান ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে আসবে।

* যাদের নাক দিয়ে পানি পড়ে তারা ডালিমের রসের সাথে দুর্বাঘাসের রস মিশিয়ে খান। উপকার পাবেন।

সতর্কতা : বেশি পরিমাণে শিকড়ের রস খেলে বিষক্রিয়া হতে পারে। এই উপকারী গাছটি বাড়ির আশে-পাশে লাগান যত্ন নিন। পরিবারের পুষ্টি চাহিদা পূরণে এগিয়ে আসুন।