11:36 pm, Tuesday, 3 December 2024

তাহাজ্জুদ নামাজের গুরুত্ব

  • Reporter Name
  • Update Time : 07:07:24 am, Thursday, 12 September 2024
  • 11 Time View

শেষ রাতের নামাজকে তাহাজ্জুদের নামাজ বলে অভিহিত করা হয়। রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিজে নিয়মিত এ নামাজ পড়তেন। সাহাবায়ে কিরামকেও নিয়মিত তাহাজ্জুদের নামাজ পড়তে উদ্বুদ্ধ করতেন। আল কোরআনে তাহাজ্জুদ নামাজের কথা বিশেষভাবে বলা হয়েছে। ইরশাদ করা হয়েছে, ‘রাতের কিছু অংশে তাহাজ্জুদের নামাজ পড়তে থাক। এ নামাজ তোমার জন্য আল্লাহর অতিরিক্ত ফজল ও করম। শিগগিরই আল্লাহ তোমাকে উভয় জগতে কাক্সিক্ষত মর্যাদায় ভূষিত করবেন।’ সুরা বনি ইসরাইল, আয়াত ৭৯। তাহাজ্জুদ নামাজ আল্লাহর প্রতি বান্দার সীমাহীন আনুগত্যের প্রকাশ ঘটায়। এ নামাজ মনকে নির্মল ও পবিত্র করে। বান্দাকে সত্য পথে অবিচল থাকতে পথ দেখায়। আল্লাহর নৈকট্য লাভে সহযোগিতা করে। যারা তাহাজ্জুদ নামাজ পড়ে আল্লাহ তাদের তাঁর প্রিয় বান্দা হিসেবে অভিহিত করে তাদের নেকি ও ইমানদারির সাক্ষ্যও দিয়েছেন। ইরশাদ করা হয়েছে, ‘আল্লাহর প্রিয় বান্দা তারা যারা তাদের প্রতিপালকের দরবারে সিজদা করে এবং দাঁড়িয়ে থেকেই রাত কাটিয়ে দেয়।’ সুরা ফুরকান, আয়াত ৬৩-৬৪। তাহাজ্জুদ নামাজের গুরুত্ব সম্পর্কে হাদিসে এসেছে, ‘ফরজ নামাজের পর অন্যান্য সুন্নত ও নফল সব নামাজের মধ্যে তাহাজ্জুদ নামাজের গুরুত্ব ও ফজিলত সবচেয়ে বেশি।’ মিশকাত। রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, আমাদের প্রভু পরওয়ারদিগার তাবারাকা ওয়াতায়ালা প্রত্যেক রাতে দুনিয়ার আসমানে (যা আমাদের দৃষ্টিগোচর হয়) নেমে আসেন যখন রাতের এক-তৃতীয়াংশ বাকি থাকে। অতঃপর তিনি বলেন, তোমাদের কে আমাকে ডাকবে! আমি তার ডাকে সাড়া দেব। কে আমার কাছে কিছু চাইবে আমি তাকে তা দেব, কে আমার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করবে আমি তাকে ক্ষমা করে দেব (মুসলিম, মিশকাত ১০৯ পৃঃ)। রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি রাতে ঘুম থেকে জেগে তাহাজ্জুদের নামাজ পড়ে এবং সে তার স্ত্রীকেও ঘুম থেকে জাগিয়ে নামাজ পড়ায় এমনকি সে যদি জেগে না উঠে, তবে তার মুখে খানিকটা পানি ছিটিয়ে দেয় তাহলে তার প্রতি আল্লাহ রহমত বর্ষণ করে থাকেন। অনুরূপ কোনো মহিলা যদি রাত্রিকালে জাগ্রত হয়ে তাহাজ্জুদ নামাজ পড়ে এবং সে তার স্বামীকে নামাজের জন্য জাগায় এমনকি স্বামী না জাগলে স্ত্রী তার মুখে পানি ছিটিয়ে তার ঘুম ভাঙিয়ে দেয় তাহলে তার প্রতিও আল্লাহর রহমত বর্ষিত হতে থাকে (আবু দাউদ, নাসায়ি, মিশকাত ১০৯ পৃঃ)। রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, আল্লাহর কাছে অতি প্রিয় নামাজ দাউদ (আ.) এর নামাজ। তিনি অর্ধেক রাত ঘুমাতেন এবং রাতের তৃতীয় ভাগে নামাজে দাঁড়াতেন আর ষষ্ঠ ভাগে আবার ঘুমাতেন (বুখারি, মুসলিম, মিশকাত ১০৯ পৃঃ)। রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘জান্নাতে একটি প্রাসাদ রয়েছে যার ভিতর থেকে বাহির এবং বাহির থেকে ভিতর দেখা যাবে।’ তখন জনৈক বেদুইন বলল, হে আল্লাহর রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এটি কার হবে? তিনি বললেন, এটি হবে তার, যে ভালো কথা বলে, অন্যান্যের আহার করায়, সিয়াম অব্যাহত রাখে এবং রাতে যখন সব মানুষ ঘুমিয়ে থাকে তখন উঠে নামাজ আদায় করে।’ (তিরমিজি)। রসুল (সা.) বলেন, ‘তিন শ্রেণির ব্যক্তিকে আল্লাহ ভালোবাসেন, তাদের দেখে হাসেন এবং খুশি হন। … (তিন শ্রেণির এক শ্রেণি হলো) সেই ব্যক্তি, যার সুন্দরী স্ত্রী এবং নরম বিছানা আছে, কিন্তু সে রাতে নামাজে দাঁড়ায়। আর তাই আল্লাহ বলেন, ‘সে তার প্রবৃত্তি চাহিদাকে ত্যাগ করেছে এবং আমাকে স্মরণ করেছে। আর সে যদি চাইত ঘুমিয়ে থাকতে পারত। (মুসতাদরাক হাকিম)। আতা খুরাসানি (রহ.) বলেন, ‘কিয়ামুল লাইল হলো শরীরের জন্য জীবন, কলবের জন্য নূর, দৃষ্টির জন্য আলো, আর অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের জন্য শক্তি। ব্যক্তি যখন রাতের নামাজ আদায় করে, সে অন্তর থেকে আনন্দ অনুভব করতে পারে। (ইবনু আবিদ দুনইয়া)। বিশিষ্ট তাবিয়ি সাঈদ ইবনুল মুসাইয়ির (রহ.) বলেছেন, যে ব্যক্তি কিয়ামুল লাইল আদায় করে, আল্লাহ তার চেহারায় নূর উদ্ভাসিত করে দেন। তাকে মুসলিমরা ভালোবাসে, যদিও-বা তাকে প্রথম দেখে। বলে, ‘সত্যিই লোকটাকে আমার খুব ভালো লাগে।’ (কিতাবুত তাহাজ্জুদ)। রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি রাতের নামাজে ১০টি আয়াত পড়বে, তার (নাম) গাফেলদের তালিকায় উঠবে না। যে ব্যক্তি দাঁড়িয়ে ১০০ আয়াত পড়বে, তার (নাম) অনুগতদের তালিকায় উঠবে। আর যে ব্যক্তি দাঁড়িয়ে ১ হাজার আয়াত পড়বে, তার নাম উঠবে মুকান্তিরীন (‘কিন্তার’ সংগ্রহকারীদের) তালিকায়। (আবু দাউদ)। রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘যে ব্যক্তি রাতের নামাজ আদায় করার নিয়ত করে বিছানায় যাবে, অতঃপর সকাল পর্যন্ত ঘুম তাকে কাবু করে ফেললেও নিয়ত অনুযায়ী সে পূর্ণ পুরস্কার পাবে। তখন তার ঘুম হবে মহামহিম রবের পক্ষ থেকে তার জন্য সদকাস্বরূপ (নাসাই শরিফ) পৃথিবীকে যখন অন্ধকারের চাদর পরিয়ে দেওয়া হয়। পৃথিবী যখন ঘুমিয়ে পড়ে তখনো কিন্তু মহিমাময় আল্লাহ নিদ্রা যান না। তিনি প্রত্যেকের গভীর রাতের দুঃখ বেদনা কষ্ট যন্ত্রণার কথা শোনেন। তাই আসুন আমরা রাতের নামাজে রবের নৈকট্য লাভ করি।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Popular Post

আমাকে রংপুরের উপদেষ্টা হিসেবে বিবেচনা করুন: ড. ইউনূস

তাহাজ্জুদ নামাজের গুরুত্ব

Update Time : 07:07:24 am, Thursday, 12 September 2024

শেষ রাতের নামাজকে তাহাজ্জুদের নামাজ বলে অভিহিত করা হয়। রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিজে নিয়মিত এ নামাজ পড়তেন। সাহাবায়ে কিরামকেও নিয়মিত তাহাজ্জুদের নামাজ পড়তে উদ্বুদ্ধ করতেন। আল কোরআনে তাহাজ্জুদ নামাজের কথা বিশেষভাবে বলা হয়েছে। ইরশাদ করা হয়েছে, ‘রাতের কিছু অংশে তাহাজ্জুদের নামাজ পড়তে থাক। এ নামাজ তোমার জন্য আল্লাহর অতিরিক্ত ফজল ও করম। শিগগিরই আল্লাহ তোমাকে উভয় জগতে কাক্সিক্ষত মর্যাদায় ভূষিত করবেন।’ সুরা বনি ইসরাইল, আয়াত ৭৯। তাহাজ্জুদ নামাজ আল্লাহর প্রতি বান্দার সীমাহীন আনুগত্যের প্রকাশ ঘটায়। এ নামাজ মনকে নির্মল ও পবিত্র করে। বান্দাকে সত্য পথে অবিচল থাকতে পথ দেখায়। আল্লাহর নৈকট্য লাভে সহযোগিতা করে। যারা তাহাজ্জুদ নামাজ পড়ে আল্লাহ তাদের তাঁর প্রিয় বান্দা হিসেবে অভিহিত করে তাদের নেকি ও ইমানদারির সাক্ষ্যও দিয়েছেন। ইরশাদ করা হয়েছে, ‘আল্লাহর প্রিয় বান্দা তারা যারা তাদের প্রতিপালকের দরবারে সিজদা করে এবং দাঁড়িয়ে থেকেই রাত কাটিয়ে দেয়।’ সুরা ফুরকান, আয়াত ৬৩-৬৪। তাহাজ্জুদ নামাজের গুরুত্ব সম্পর্কে হাদিসে এসেছে, ‘ফরজ নামাজের পর অন্যান্য সুন্নত ও নফল সব নামাজের মধ্যে তাহাজ্জুদ নামাজের গুরুত্ব ও ফজিলত সবচেয়ে বেশি।’ মিশকাত। রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, আমাদের প্রভু পরওয়ারদিগার তাবারাকা ওয়াতায়ালা প্রত্যেক রাতে দুনিয়ার আসমানে (যা আমাদের দৃষ্টিগোচর হয়) নেমে আসেন যখন রাতের এক-তৃতীয়াংশ বাকি থাকে। অতঃপর তিনি বলেন, তোমাদের কে আমাকে ডাকবে! আমি তার ডাকে সাড়া দেব। কে আমার কাছে কিছু চাইবে আমি তাকে তা দেব, কে আমার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করবে আমি তাকে ক্ষমা করে দেব (মুসলিম, মিশকাত ১০৯ পৃঃ)। রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি রাতে ঘুম থেকে জেগে তাহাজ্জুদের নামাজ পড়ে এবং সে তার স্ত্রীকেও ঘুম থেকে জাগিয়ে নামাজ পড়ায় এমনকি সে যদি জেগে না উঠে, তবে তার মুখে খানিকটা পানি ছিটিয়ে দেয় তাহলে তার প্রতি আল্লাহ রহমত বর্ষণ করে থাকেন। অনুরূপ কোনো মহিলা যদি রাত্রিকালে জাগ্রত হয়ে তাহাজ্জুদ নামাজ পড়ে এবং সে তার স্বামীকে নামাজের জন্য জাগায় এমনকি স্বামী না জাগলে স্ত্রী তার মুখে পানি ছিটিয়ে তার ঘুম ভাঙিয়ে দেয় তাহলে তার প্রতিও আল্লাহর রহমত বর্ষিত হতে থাকে (আবু দাউদ, নাসায়ি, মিশকাত ১০৯ পৃঃ)। রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, আল্লাহর কাছে অতি প্রিয় নামাজ দাউদ (আ.) এর নামাজ। তিনি অর্ধেক রাত ঘুমাতেন এবং রাতের তৃতীয় ভাগে নামাজে দাঁড়াতেন আর ষষ্ঠ ভাগে আবার ঘুমাতেন (বুখারি, মুসলিম, মিশকাত ১০৯ পৃঃ)। রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘জান্নাতে একটি প্রাসাদ রয়েছে যার ভিতর থেকে বাহির এবং বাহির থেকে ভিতর দেখা যাবে।’ তখন জনৈক বেদুইন বলল, হে আল্লাহর রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এটি কার হবে? তিনি বললেন, এটি হবে তার, যে ভালো কথা বলে, অন্যান্যের আহার করায়, সিয়াম অব্যাহত রাখে এবং রাতে যখন সব মানুষ ঘুমিয়ে থাকে তখন উঠে নামাজ আদায় করে।’ (তিরমিজি)। রসুল (সা.) বলেন, ‘তিন শ্রেণির ব্যক্তিকে আল্লাহ ভালোবাসেন, তাদের দেখে হাসেন এবং খুশি হন। … (তিন শ্রেণির এক শ্রেণি হলো) সেই ব্যক্তি, যার সুন্দরী স্ত্রী এবং নরম বিছানা আছে, কিন্তু সে রাতে নামাজে দাঁড়ায়। আর তাই আল্লাহ বলেন, ‘সে তার প্রবৃত্তি চাহিদাকে ত্যাগ করেছে এবং আমাকে স্মরণ করেছে। আর সে যদি চাইত ঘুমিয়ে থাকতে পারত। (মুসতাদরাক হাকিম)। আতা খুরাসানি (রহ.) বলেন, ‘কিয়ামুল লাইল হলো শরীরের জন্য জীবন, কলবের জন্য নূর, দৃষ্টির জন্য আলো, আর অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের জন্য শক্তি। ব্যক্তি যখন রাতের নামাজ আদায় করে, সে অন্তর থেকে আনন্দ অনুভব করতে পারে। (ইবনু আবিদ দুনইয়া)। বিশিষ্ট তাবিয়ি সাঈদ ইবনুল মুসাইয়ির (রহ.) বলেছেন, যে ব্যক্তি কিয়ামুল লাইল আদায় করে, আল্লাহ তার চেহারায় নূর উদ্ভাসিত করে দেন। তাকে মুসলিমরা ভালোবাসে, যদিও-বা তাকে প্রথম দেখে। বলে, ‘সত্যিই লোকটাকে আমার খুব ভালো লাগে।’ (কিতাবুত তাহাজ্জুদ)। রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি রাতের নামাজে ১০টি আয়াত পড়বে, তার (নাম) গাফেলদের তালিকায় উঠবে না। যে ব্যক্তি দাঁড়িয়ে ১০০ আয়াত পড়বে, তার (নাম) অনুগতদের তালিকায় উঠবে। আর যে ব্যক্তি দাঁড়িয়ে ১ হাজার আয়াত পড়বে, তার নাম উঠবে মুকান্তিরীন (‘কিন্তার’ সংগ্রহকারীদের) তালিকায়। (আবু দাউদ)। রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘যে ব্যক্তি রাতের নামাজ আদায় করার নিয়ত করে বিছানায় যাবে, অতঃপর সকাল পর্যন্ত ঘুম তাকে কাবু করে ফেললেও নিয়ত অনুযায়ী সে পূর্ণ পুরস্কার পাবে। তখন তার ঘুম হবে মহামহিম রবের পক্ষ থেকে তার জন্য সদকাস্বরূপ (নাসাই শরিফ) পৃথিবীকে যখন অন্ধকারের চাদর পরিয়ে দেওয়া হয়। পৃথিবী যখন ঘুমিয়ে পড়ে তখনো কিন্তু মহিমাময় আল্লাহ নিদ্রা যান না। তিনি প্রত্যেকের গভীর রাতের দুঃখ বেদনা কষ্ট যন্ত্রণার কথা শোনেন। তাই আসুন আমরা রাতের নামাজে রবের নৈকট্য লাভ করি।