2:12 pm, Saturday, 23 November 2024

যে অভ্যাস আল্লাহর সন্তুষ্টির পথে অন্তরায়

  • Reporter Name
  • Update Time : 07:06:49 am, Thursday, 12 September 2024
  • 9 Time View

মানুষ পীরের হাতে বাইআত হওয়া বা কোনো বড় আলেমের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপনকে যথেষ্ট মনে করে। তারা সালিক বা সাধক হওয়াকেই বড় কিছু মনে করে। কিন্তু আত্মশুদ্ধির পথে সালিক হওয়ার মধ্যে সার্থকতা নেই, সার্থকতা হালিক তথা আমিত্ব শেষ করে দেওয়ার মধ্যেই সার্থকতা। আমিত্ব এমনভাবে শেষ করে দিতে হবে যেন অন্তরে এই অনুভূতিও না থাকে যে আমি আমার আমিত্বকে শেষ করে দিয়েছি। যেমন প্রকৃত ও গভীর ঘুম তাকেই বলে যেখানে ঘুমন্ত ব্যক্তির নিজের ঘুমেরও কোনো উপলব্ধি থাকে না। আর আমি ঘুমাচ্ছি এমন উপলব্ধি থাকে, তাহলে সেটা ঘুম নয়, সেটা তন্দ্রা। সুফি কবি আল্লামা রুমি (রহ.) সুন্দর বলেছেন, ‘নিজের জ্ঞানবুদ্ধিকে তীক্ষ্ণ ও সমৃদ্ধ করাই প্রকৃত সফলতার পথ নয়। কেননা ভগ্ন হৃদয়ে নিজেকে মিটিয়ে দেওয়া ছাড়া মহান আল্লাহর দয়া-অনুগ্রহ লাভ করা যায় না।’ আমিত্ব শেষ করা ইবাদত ও আনুগত্যের আসল রুহ বা প্রকৃত বস্তু। কেননা জ্ঞানগত পাণ্ডিত্য ও আমলি পূর্ণতা যতই হোক, সাধনা ও ইবাদত যত বেশি করুক-এটা সালিক বা আল্লাহপ্রেমী মুমিনের প্রকৃত উদ্দেশ্য হতে পারে না। তার মূল উদ্দেশ্য মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করা। আর আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টি ব্যক্তির নিজের অপারগতা, নম্রতা, হৃদয়ের ভগ্নদশার অনুভূতির মধ্যে নিহিত। একজন মুমিনের বৈশিষ্ট্য হলো সব কিছু যথাযথ করার পরও নিজেকে নিতান্ত অপারগ মনে করবে এবং নিজের ত্রুটি-বিচ্যুতির জন্য আল্লাহ তাআলার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করতে থাকবে। মহানবী (সা.) ও সাহাবায়ে কিরাম (রা.)-এর সমপরিমাণ ইবাদত-বন্দেগি করার মতো মানুষ কে আছে? কিন্তু তাদের অভ্যাস ছিল সারা রাত আল্লাহর ইবাদত-জিকির করা শেষে আল্লাহর কাছে ক্ষমা ভিক্ষা করে কান্নাকাটি করতেন। পবিত্র কোরআনে তাদের প্রশংসায় বলা হয়েছে, ‘তারা রাতের সামান্য অংশই অতিবাহিত করে নিদ্রায়, রাতের শেষ প্রহরে তারা ক্ষমা প্রার্থনা করে।’ (সুরা : জারিয়াত, আয়াত : ১৭-১৮) উল্লিখিত আয়াতে আলেম, বক্তা ও লেখকদের জন্য এবং যারা দ্বিন প্রতিষ্ঠার জন্য কাজ করে যাচ্ছেন তাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ পথনির্দেশ আছে। তা হলো দ্বিনের কাজ করতে পারা কোনো গর্বের বিষয় নয়, বরং কোনো নেক আমল করতে পারাকে মহান আল্লাহর একটি বিশেষ অনুদান মনে করে তার কৃতজ্ঞতা আদায় করা আবশ্যক। সঙ্গে সঙ্গে এটা স্মরণে রাখা যে নেক আমলগুলো আল্লাহ তাআলার মাহাত্ম্য ও মর্যাদা অনুযায়ী হয়নি, তাই অনুতপ্ত হয়ে আল্লাহর দরবারে তাওবা করতে হবে। আল্লাহর পথের সাধকদের আরো একটি বিষয় স্মরণে রাখা আবশ্যক। তাহলো শুধু সবক আদায় তথা জিকির ও তাসবিহ পাঠই আত্মশুদ্ধির জন্য যথেষ্ট নয়, বরং আত্মার ব্যাধিগুলোও দূর করা প্রয়োজন। কেননা যার পেটে রোগ-জীবাণু আছে, তাকে যদি উন্নত মানের খাবার পরিবেশন করা হয়, তবে তার রোগই বরং বৃদ্ধি পাবে। এজন্য প্রথমে তার পেটকে জীবাণুমুক্ত করতে হবে। এরপর তাকে শক্তিবর্ধক উন্নতমানের খাবার দেওয়া হলে তখন সেটা তার স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী হবে। কারো ভেতর যদি বাতেনি রোগ অহংকার ও লোক-দেখানো মনোভাব বিদ্যমান থাকে, এ অবস্থায় অধিক পরিমাণে জিকির ও ওজিফা পাঠ কোনো কোনো ক্ষেত্রে তার বাতেনি রোগ বাড়িয়ে দিতে পারে। তাই বাতেনি রোগের চিকিৎসা আগে করে নেওয়া উচিত। এরপর জিকির ও ওজিফা দেওয়া উচিত। পূর্ববর্তী বুজুর্গরা এমনটিই করতেন। বর্তমান সালিকরা বিষয়টিকে গুরুত্ব দেয় না। ফলে তারা পীর-মাশায়েখের খিদমতে থেকে জিকির-ওজিফায় লিপ্ত থাকলেও অনেকেরই আত্মিক সংশোধন হয় না। মনে রাখতে হবে, গুনাহের কাজের অভ্যাস থাকা অবস্থায় কোনো ব্যক্তি কখনোই আল্লাহর ওলি ও প্রিয়ভাজন হতে পারে না।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

যে অভ্যাস আল্লাহর সন্তুষ্টির পথে অন্তরায়

Update Time : 07:06:49 am, Thursday, 12 September 2024

মানুষ পীরের হাতে বাইআত হওয়া বা কোনো বড় আলেমের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপনকে যথেষ্ট মনে করে। তারা সালিক বা সাধক হওয়াকেই বড় কিছু মনে করে। কিন্তু আত্মশুদ্ধির পথে সালিক হওয়ার মধ্যে সার্থকতা নেই, সার্থকতা হালিক তথা আমিত্ব শেষ করে দেওয়ার মধ্যেই সার্থকতা। আমিত্ব এমনভাবে শেষ করে দিতে হবে যেন অন্তরে এই অনুভূতিও না থাকে যে আমি আমার আমিত্বকে শেষ করে দিয়েছি। যেমন প্রকৃত ও গভীর ঘুম তাকেই বলে যেখানে ঘুমন্ত ব্যক্তির নিজের ঘুমেরও কোনো উপলব্ধি থাকে না। আর আমি ঘুমাচ্ছি এমন উপলব্ধি থাকে, তাহলে সেটা ঘুম নয়, সেটা তন্দ্রা। সুফি কবি আল্লামা রুমি (রহ.) সুন্দর বলেছেন, ‘নিজের জ্ঞানবুদ্ধিকে তীক্ষ্ণ ও সমৃদ্ধ করাই প্রকৃত সফলতার পথ নয়। কেননা ভগ্ন হৃদয়ে নিজেকে মিটিয়ে দেওয়া ছাড়া মহান আল্লাহর দয়া-অনুগ্রহ লাভ করা যায় না।’ আমিত্ব শেষ করা ইবাদত ও আনুগত্যের আসল রুহ বা প্রকৃত বস্তু। কেননা জ্ঞানগত পাণ্ডিত্য ও আমলি পূর্ণতা যতই হোক, সাধনা ও ইবাদত যত বেশি করুক-এটা সালিক বা আল্লাহপ্রেমী মুমিনের প্রকৃত উদ্দেশ্য হতে পারে না। তার মূল উদ্দেশ্য মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করা। আর আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টি ব্যক্তির নিজের অপারগতা, নম্রতা, হৃদয়ের ভগ্নদশার অনুভূতির মধ্যে নিহিত। একজন মুমিনের বৈশিষ্ট্য হলো সব কিছু যথাযথ করার পরও নিজেকে নিতান্ত অপারগ মনে করবে এবং নিজের ত্রুটি-বিচ্যুতির জন্য আল্লাহ তাআলার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করতে থাকবে। মহানবী (সা.) ও সাহাবায়ে কিরাম (রা.)-এর সমপরিমাণ ইবাদত-বন্দেগি করার মতো মানুষ কে আছে? কিন্তু তাদের অভ্যাস ছিল সারা রাত আল্লাহর ইবাদত-জিকির করা শেষে আল্লাহর কাছে ক্ষমা ভিক্ষা করে কান্নাকাটি করতেন। পবিত্র কোরআনে তাদের প্রশংসায় বলা হয়েছে, ‘তারা রাতের সামান্য অংশই অতিবাহিত করে নিদ্রায়, রাতের শেষ প্রহরে তারা ক্ষমা প্রার্থনা করে।’ (সুরা : জারিয়াত, আয়াত : ১৭-১৮) উল্লিখিত আয়াতে আলেম, বক্তা ও লেখকদের জন্য এবং যারা দ্বিন প্রতিষ্ঠার জন্য কাজ করে যাচ্ছেন তাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ পথনির্দেশ আছে। তা হলো দ্বিনের কাজ করতে পারা কোনো গর্বের বিষয় নয়, বরং কোনো নেক আমল করতে পারাকে মহান আল্লাহর একটি বিশেষ অনুদান মনে করে তার কৃতজ্ঞতা আদায় করা আবশ্যক। সঙ্গে সঙ্গে এটা স্মরণে রাখা যে নেক আমলগুলো আল্লাহ তাআলার মাহাত্ম্য ও মর্যাদা অনুযায়ী হয়নি, তাই অনুতপ্ত হয়ে আল্লাহর দরবারে তাওবা করতে হবে। আল্লাহর পথের সাধকদের আরো একটি বিষয় স্মরণে রাখা আবশ্যক। তাহলো শুধু সবক আদায় তথা জিকির ও তাসবিহ পাঠই আত্মশুদ্ধির জন্য যথেষ্ট নয়, বরং আত্মার ব্যাধিগুলোও দূর করা প্রয়োজন। কেননা যার পেটে রোগ-জীবাণু আছে, তাকে যদি উন্নত মানের খাবার পরিবেশন করা হয়, তবে তার রোগই বরং বৃদ্ধি পাবে। এজন্য প্রথমে তার পেটকে জীবাণুমুক্ত করতে হবে। এরপর তাকে শক্তিবর্ধক উন্নতমানের খাবার দেওয়া হলে তখন সেটা তার স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী হবে। কারো ভেতর যদি বাতেনি রোগ অহংকার ও লোক-দেখানো মনোভাব বিদ্যমান থাকে, এ অবস্থায় অধিক পরিমাণে জিকির ও ওজিফা পাঠ কোনো কোনো ক্ষেত্রে তার বাতেনি রোগ বাড়িয়ে দিতে পারে। তাই বাতেনি রোগের চিকিৎসা আগে করে নেওয়া উচিত। এরপর জিকির ও ওজিফা দেওয়া উচিত। পূর্ববর্তী বুজুর্গরা এমনটিই করতেন। বর্তমান সালিকরা বিষয়টিকে গুরুত্ব দেয় না। ফলে তারা পীর-মাশায়েখের খিদমতে থেকে জিকির-ওজিফায় লিপ্ত থাকলেও অনেকেরই আত্মিক সংশোধন হয় না। মনে রাখতে হবে, গুনাহের কাজের অভ্যাস থাকা অবস্থায় কোনো ব্যক্তি কখনোই আল্লাহর ওলি ও প্রিয়ভাজন হতে পারে না।