স্টাফ রিপোর্টার॥ বিভিন্ন হতাশার কারণে রংপুরের বিভিন্ন কৃষক কৃষি পেশাই ছেড়ে দিয়েছেন। সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও খাদ্য নিরাপত্তাহীনতা, আয়ের বৈষম্য, যান্ত্রিকীকরণের কারণে কাজের ক্ষেত্র কমে যাওয়া, জলবায়ু পরিবর্তনসহ বিভিন্ন কারণে কৃষি পেশা ছাড়ছে এখানকার মানুষ। অনেক কৃষকই এখন নিজের দেশে চাষ করার বদলে বিদেশে গিয়ে অন্যের জন্য ফসল ফলাচ্ছে।
জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সারা দেশের ন্যায় রংপুরের কৃষিতে ব্যাপক নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। গবেষকদের তথ্যমতে, রংপুরে কম বৃষ্টিপাত, দীর্ঘস্থায়ী খরা ও ভূগর্ভস্থ পানি উত্তোলনের কারণে পানির স্তর ক্রমশ নিচে নামছেই। একই সঙ্গে অস্বাভাবিক হারে বাড়ছে তাপমাত্রা। এতে এই এলাকার মানুষের জীবনমানে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন আসছে।এছাড়াও জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে এখানকার নদীভাঙন বাড়ছে। ফলে প্রচুর উৎপাদনশীল কৃষিজমি নদীগর্ভে বিলীন হচ্ছে। ইদানিং এই অঞ্চলে খরার তীব্রতা দিন দিন বাড়ছে। খরার প্রভাবে আমন ধান,আউশ ও বোরো ধান, পাট, ডাল, তেল ফসল, আলু, আখ এবং শীতকালীন সবজি চাষাবাদ চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বলে অভিমত বিশ্লেষকদের।
অন্যদিকে কৃষি অর্থনীতিবিদরা বলছেন, সারা দেশের ন্যায় রংপুরের কৃষকরা উচ্চমূল্যের কৃষিপণ্য উৎপাদন করলেও নিজের জন্য কিছুই রাখতে পারেন না। এমনকি আর্থিক অসচ্ছলতার কারণে উৎপাদিত ফসল মাঠেই বিক্রি করতে বাধ্য হন। পরিস্থিতি এখন এমন দাঁড়িয়েছে যে কৃষক নিজে যে খাদ্য ফলান, একটি পর্যায়ে গিয়ে তিনি তা-ই বেশি দামে কিনতে বাধ্য হচ্ছেন।
এ বিষয়ে আফজাল হোসেন নামের একজন কৃষক বলেন, কৃষক কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে ফসল ফলায়। কিন্তু বর্তমান বাজারে কৃষক তার পরিশ্রমের যথাযোগ্য সম্মান পায় না। কতিপয় অসাধু ব্যবসায়ী কৃষকের কাছ থেকে যে মূল্যে পণ্য ক্রয় করছে ভোক্তা পর্যন্ত এসে সেই পণ্যের মূল্য দ্বিগুণ অথবা তার অধিক হারে বিক্রি করছে।
আরেকজন কৃষক কাউনিয়া উপজেলার তসলিম জানান, একসময় পাঁচ দোন(২৪ শতকে ১ দোন) জমিতে নিজে চাষাবাদ করতেন। ক্রমাগত সেচ খরচ বেড়ে যাওয়াসহ নানা কারণে কৃষিকাজ করে এখন সংসার চলছে না তার। তাই রংপুর নগরীতে এসে অটো চালাচ্ছেন। আমার মতো যারা কৃষির ওপর নির্ভরশীল ছিল, তারা কোণঠাসা হয়ে পড়েছে। একমাত্র ধানচাষ করে বেশিরভাগ সময়ই লোকসানে পড়তে হচ্ছে।
আগে কৃষির সঙ্গে আমাদের নিবিড় সম্পর্ক ছিল। বাপ-দাদার পেশা। কিন্তু সেটা দিয়ে আর সংসার চালানো যাচ্ছে না বলে জানান তিনি। উল্লেখ্য, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) শ্রমশক্তি জরিপের হালনাগাদ তথ্য বলছে, ২০২৩ সালের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত সময়ে কৃষিকাজ ছেড়েছেন ১৫ লাখ ৮০ হাজার মানুষ।