2:12 pm, Saturday, 23 November 2024

গৃহবধু হতে ফাইটার ফর ডেমোক্রেসি’‘ বাংলাদেশের নেলসন ম্যান্ডেলা, শান্তিতে নোবেল কী পাবেন?

  • Reporter Name
  • Update Time : 12:32:22 pm, Monday, 9 September 2024
  • 10 Time View

মোঃ হায়দার আলী

দক্ষিণ আফ্রিকার বর্ণবাদবিরোধী আন্দোলনের অবিসংবাদিত নেতা নেলসন ম্যান্ডেলার সঙ্গে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার তুলনা করেছেন দলটি নেতা কর্মীরা। তারা বলেছেন, দক্ষিণ আফ্রিকা তথা সারাবিশ্বেও মানুষের নিকট বর্ণবাদ বিরোধী নেতা নেলসন ম্যান্ডেলা ছিলেন অত্যন্ত শ্রদ্ধেয় ও অনুকরণীয় ব্যক্তিত্ব। নেলসন ম্যান্ডেলা ছিলেন এমন একজন মহান নায়ক, যিনি নিজের সুখ স্বাচ্ছন্দ্য বিসর্জন দিয়ে কেবল মাত্র মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠা এবং বর্ণবাদের বিরুদ্ধে সোচ্চার থেকেছেন। আর এ কারণে তাঁকে জীবনের সিংহভাগ কারান্তরীণ থাকতে হয়েছে। ’শত নির্যাতনের মাঝেও নিজের মনোবল অটুট রেখেছেন তবু ও অন্যায় ও অনিয়মের কাছে মুহুর্তেও জন্য ও মাথা নত করেন নি।’

গৃহবধু থেকে দলের চেয়ারম্যান, প্রধানমন্ত্রী, বিরোধীদলীয় নেতা, আপোষহীন নেত্রী, তেমনী স্বৈরাচার হাসিনার কাছে কোন সময়ের জন্য মাথা নত করেন নি। তিনি  গণতন্ত্রের জন্য জেল খাটছেন। বাড়ি হারিয়েছেন, আদরের ছোট ছেলেকে হারিয়েছেন এই গণতন্ত্রের জন্য। আগামীর   বিশ্বনেতা হবেন বেগম খালেদা জিয়া। বিশ্ববাসীর কাছে গণতন্ত্রের মাতা হিসেবে পরিচিত হবেন, শান্তিতে নোবেল পাওয়ার দাবী রাখে  দলটির নেতারা জোর দিয়ে বলছেন।

৫ আগস্ট শেখ হাসিনার ক্ষমতাচ্যুতির পরদিনই রাষ্ট্রপতির আদেশে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার শাস্তি মওকুফ ও মুক্তির ঘোষণা দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। জিয়া অরফানেজ ও জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলায় তাকে এ দন্ড দিয়েছিলেন আদালত।

দলের প্রধানের মুক্তিতে ১৮ বছর ক্ষমতার বাইরে থাকা দল বিএনপির নেতা  কর্মীদের মধ্যে এখন বেশ চাঙ্গা ভাব। খালেদা জিয়ার মুক্তির পরদিন ৭ আগস্টেই এক মহাসমাবেশের আয়োজন করে বিএনপি। জেলমুক্ত খালেদা জিয়াকে কেন্দ্র করে রাজনীতিতে এখন বেশ শক্তিশালী হয়ে উঠেছে দলটি। দীর্ঘদিন আটক থাকা নেতাকর্মীরা ছাড়া পেয়ে রাজনীতির ময়দানে সক্রিয় হয়েছেন।

বেগম খালেদা জিয়া (জন্ম: আগস্ট ১৫ ১৯৪৫ ), জন্মগত নাম খালেদা খানম পুতুল, একজন বাংলাদেশি রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব যিনি ১৯৯১-১৯৯৬ সাল এবং ২০০১-২০০৬ সাল পর্যন্ত তিনি প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি বাংলাদেশের প্রথম মহিলা প্রধানমন্ত্রী ও প্রধানমন্ত্রী রূপে মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশগুলোর মাঝে দ্বিতীয় মহিলা সরকারপ্রধান (বেনজির ভুট্টোর পর)। তার স্বামী জিয়াউর রহমানের শাসনকালে তিনি ফার্স্ট লেডি ছিলেন। তিনি বর্তমানে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) চেয়ারপার্সন ও দলনেত্রী, যা তার স্বামী জিয়াউর রহমান কর্তৃক ১৯৭৮ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়।

১৯৮২ সালে সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল এইচ এম এরসাদের নেতৃত্বে পরিচালিত সামরিক অভ্যুত্থানের পর থেকে ১৯৯০ সালে সামরিক স্বৈরশাসক হিসেবে এরশাদের পতনের পূর্ব পর্যন্ত খালেদা জিয়া গণতন্ত্রের জন্য চলমান আন্দোলনে নেতৃত্বদানের মাধ্যমে সহায়তা করেন। ১৯৯১ এর নির্বাচনে বিএনপি জয়ী হওয়ায় তিনি প্রধানমন্ত্রী হন। ১৯৯৬-এর স্বল্পস্থায়ী সরকারেও তিনি দায়িত্বপালন করেন, যখন কিনা অন্য দলগুলো ওই নির্বাচনকে বর্জন করেছিল। ১৯৯৬ সালের পরবর্তী সাধারণ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসে। খালেদা জিয়ার দল পুনরায় ক্ষমতায় আসে ২০০১ সালে। ১৯৯১, ১৯৯৬ ও ২০০১ সালের নির্বাচনে তিনি নিজস্ব ৫টি সংসদীয় আসনের সবগুলোতেই জয়ী হন যেটা বাংলাদেশের ইতিহাসে বিরল দৃষ্টান্ত।

ফোর্বস সাময়িকীর বিশ্বের ১০০ ক্ষমতাবান নারী নেতৃত্বের তালিকায়  ২০০৪ সালে জিয়ার অবস্থান ১৪তম, ২০০৫ সালে ২৯তম, ও ২০০৬ সালে ৩৩তম। ২০০৬ সালে তার সরকারের নির্ধারিত শাসনকাল শেষ হওয়ার পর, ২০০৭ সালে নির্ধারিত নির্বাচন রাজনৈতিক সহিংসতা ও অন্তর্দ্বন্দ্বের কারণে বিলম্বিত হয়, ফলশ্রুতিতে তত্ত্বাবধায়ক সরকার কর্তৃক সামরিক পদ্ধতিতে রক্তপাতবিহীন ক্ষমতা অধিগ্রহণ করা হয়। ওই সরকারের সময়কালে, খালেদা জিয়া তার দুই সন্তানসহ দুর্নীতির দায়ে অভিযুক্ত হন।

গত দুই দশকের অধিকাংশ সময়ে, খালেদা জিয়ার প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন আওয়ামী লীগ নেত্রী শেখ হসিনা  ১৯৯১ সাল থেকে তারা অনুক্রমিকভাবে দিনের ভোট রাতে করে, প্রকাশ্যে নৌকায় সীল মেরে  ভোটার বিহীন নির্বাচনে প্রধানমন্ত্রী হয়ে আসছিলেন। গত ৫ আগস্ট ছাত্র জনতার আন্দোলনে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে পালিয়ে ভারতে অবস্থান করছেন। সে সাথে পালিয়ে গেছেন হেবিওয়েট মন্ত্রী, এমপি, মেয়র, উপজেলা চেয়ারম্যান আওয়ামী লীগের নেতা পাতিনেতারা। এরপর থেকে সব চেয়ে জনপ্রিয়তায় শীর্ষে থাকা  দেশ নেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার কথা মানুষের মুখে উচ্চারিত হচ্ছে, প্রচার হচ্ছে আকাশে বাতাসে, টেকনাফ থেকে তেতুলিয়া পর্যন্ত। ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারিতে, খালেদা জিয়া দুর্নীতির দায়ে পাঁচ বছরের কারাবাসের দন্ডপ্রাপ্ত হন। এতে তিনি প্রধানমন্ত্রী থাকাকালীন একটি এতিমখানা ট্রাস্ট গঠনের সময় অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে  দোষী সাব্যস্ত হন। কারাবাস ভোগ করেন।

বর্নাঢ্য রাজনৈতিক কর্মময় জীবনঃ ১৯৮১ সালের ৩০ মে এক সামরিক অভ্যুত্থানে জিয়াউর রহমান নিহত হন। এরপর বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের  বিভিন্ন স্তরের নেতা কর্মীদের আহ্বানে গৃহবধু থেকে তিনি ১৯৮২ সালের ৩ জানুয়ারি বিএনপিতে যোগ দেন। ১৯৮২ সালের ২৪ মার্চ সেনাপ্রধান লেফটেন্যান্ট জেনারেল এরশাদ বিচারপতি আবদুস সাত্তারকে ক্ষমতাচ্যুত করেন। বেগম জিয়া এর বিরোধিতা করেন। ১৯৮৩ সালের মার্চ মাসে তিনি বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান হন। ১৯৮৩ সালের ১ এপ্রিল দলের বর্ধিত সভায় তিনি প্রথম বক্তৃতা করেন। বিচারপতি সাত্তার অসুস্থ হয়ে পড়লে তিনি দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপার্সন হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৮৪ সালের ১০ মে দলের চেয়ারপার্সন নির্বাচনে তিনি বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন। তার নেতৃত্বেই মূলত বিএনপির পূর্ণ বিকাশ হয়। তিনি গৃহবধু থেকে দলের নেতৃত্বে এসে দলকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যান এবং আর পেছনে ফিরে দেখতে হয় নি।

এরশাদবিরোধী আন্দোলন: ১৯৮৩ সালের বেগম জিয়ার নেতৃত্বে সাত দলীয় ঐক্যজোট গঠিত হয়। একই সময় এরশাদের সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে আন্দোলন আরম্ভ হয়। বেগম জিয়া প্রথমে বিএনপিকে নিয়ে ১৯৮৩ এর সেপ্টেম্বর থেকে ৭ দলীয় ঐক্যজোটের মাধ্যমে এরশাদ বিরোধী আন্দোলনের সূচনা করেন। একই সময় তার নেতৃত্বে সাত দল আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন পনেরো দলের সাথে যৌথভাবে আন্দোলনের কর্মসূচির সূত্রপাত করে। ১৯৮৬ সাল পর্যন্ত পাঁচ দফা আন্দোলন চলতে থাকে। কিন্তু ১৯৮৬ সালের ২১ মার্চ রাতে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা এরশাদের অধীনে নির্বাচনে অংশ নেয়ার সিদ্ধান্ত নিলে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনে বাধার সৃষ্টি হয়। ১৫ দল ভেঙে ৮ দল ও ৫ দল হয়। ৮ দল নির্বাচনে যায়। এরপর বেগম জিয়ার নেতৃত্বে ৭ দল, পাঁচ দলীয় ঐক্যজোট আন্দোলন চালায় এবং নির্বাচন প্রত্যাখ্যান করে। ১৯৮৭ সাল থেকে খালেদা জিয়া এরশাদ হটাও শীর্ষক এক দফার আন্দোলনের সূত্রপাত করেন। এর ফলে এরশাদ সংসদ ভেঙে দেন। তারপর পুনরায় ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের উপক্রম হয়। অবশেষে দীর্ঘ আট বছর অবিরাম, নিরলস ও আপোসহীন সংগ্রামের পর ১৯৯১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত সংসদ নির্বাচনে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে বিএনপি বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন। সেই নির্বাচনে খালেদা জিয়া মোট পাঁচটি আসনে অংশ নিয়ে পাঁচটিতেই জয়লাভ করেন।

প্রধানমন্ত্রিত্বের ১ম মেয়াদকাল:১৯৯১ সালের ১৯ মার্চ বেগম খালেদা জিয়া পঞ্চম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারে প্রধানমন্ত্রী নিযুক্ত হন। তার সরকার দেশে সংসদীয় পদ্ধতির সরকার প্রতিষ্ঠিত করে। ২ এপ্রিল তিনি সংসদে সরকারের পক্ষে এই বিল উত্থাপন করেন। একই দিন তিনি তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রধান বিচারপতি শাহাবুদ্দিন আহমেদ কে স্বপদে ফিরে যাবার ব্যবস্থা করে একাদশ সংশোধনী বিল আনেন। ৬ আগস্ট ১৯৯১ সালের সংসদে সর্বসম্মতিক্রমে দুটি বিল পাশ হয়।

প্রধানমন্ত্রিত্বের ২য় মেয়াদকাল: ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি ষষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচন হয়। যা পরবর্তীতে ৯৬ এর একদলীয় নির্বাচন হিসেবে গণ্য হয়। সকল বিরোধীদলের আপত্তির পরও খালেদা জিয়া ও তার দল এই একক নির্বাচন করেন। আওয়ামী লীগসহ সব বিরোধী দল এই নির্বাচন বয়কট করে। এই সংসদ মাত্র ১৫ দিন স্থায়ী হয়। খালেদা জিয়া এই সংসদেরও  প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। প্রবল গণ আন্দোলন ও বর্হিবিশ্বের চাপে ষষ্ঠ জাতীয় সংসদে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিল পাস হয় এবং খালেদা জিয়া পদত্যাগ করেন।

বিরোধীদলীয় নেতৃত্বের ১ম মেয়াদকাল: ১৯৯৬ সালে সপ্তম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি মোট ১১৬ আসনে জয় লাভ করে, যা সরকার গঠনে যথেষ্ট ছিল না। আওয়ামী লীগ মোট ১৪৭ আসন লাভ করে, তারা জাতীয় পার্টির সমর্থন নিয়ে সরকার গঠন করে। বিএনপি সপ্তম সংসদে বাংলাদেশের ইতিহাস সর্ববৃহৎ বিরোধী দল হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। বেগম খালেদা জিয়া আওয়ামী লীগের পাঁচ বছর শাসনকালে সংসদে বিরোধী দলনেত্রী ছিলেন।

প্রধানমন্ত্রিত্বের ৩য় মেয়াদকাল: অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে   বিএনপি বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী, ইসলামি ঐক্যজোট ও জাতীয় পার্টির সাথে চারদলীয় ঐক্যজোট গঠন করে। ২০০১ সালের ১ অক্টোবর সংসদ নির্বাচনে চারদলীয় ঐক্যজোট বিপুল ভোটে জয়ী হয়ে সরকার গঠন করে। খালেদা জিয়া এই সংসদেও প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেছেন। ২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর এই সংসদের মেয়াদ শেষ হয়।

বিরোধীদলীয় নেতৃত্বের ২য় মেয়াদকাল ২০০৮ সালের ডিসেম্বর মাসে অনুষ্ঠিত নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে চারদলীয় ঐক্যজোট বিপুল ভোটের ব্যবধানে পরাজিত হয়। মহাজোটের প্রায় ২৬০ টি আসনের বিপরীতে চার দলীয় ঐক্যজোট মাত্র ৩২টি আসন লাভ করে।

আটক: ১৯৮২ সালের ৩ জানুয়ারি বিএনপির প্রাথমিক সদস্য রূপে দলে যোগ দেবার পর থেকে মোট পাঁচ বার তিনি আটক হন। এরশাদবিরোধী আন্দোলনের সময় ১৯৮৩ সালের ২৮ নভেম্বর, ১৯৮৪ সালের ৩ মে, ১৯৮৭ সালের ১১ নভেম্বর আটক হন। তিনি ২০০৭ সালের সেপ্টেম্বর ৩ তারিখে দুর্নীতির অভিযোগে পুত্রসহ আটক হন। ২০০৮ সালের ১১ই সেপ্টেম্বার তিনি সর্বোচ্চ বিচারালয়ের নির্দেশে মুক্তিলাভ করেন। তত্ত্বাবধায়ক সরকার কর্তৃক বন্দী হবার পর দীর্ঘ এক বছর সাত দিন কারাগারে অবস্থানকালে তার বিরুদ্ধে চলতে থাকা কোন অভিযোগেরই উল্লেখযোগ্য কোন অগ্রগতি হয়নি এবং চলতে থাকা তদন্তে তার বিরুদ্ধে কোন অভিযোগই প্রমাণিত হয়নি। ৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় ২ কোটি ১০ লাখ টাকা আত্মসাতের দায়ে তার ৫ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড হয়। এরপরই তাকে বন্দী করে পরিত্যক্ত কেন্দ্রীয় কারাগার কাশিমপুরে নিয়ে যাওয়া হয়।

সেনানিবাসের বাসা ত্যাগ: ১৩ নভেম্বর ২০১০ ইং বেগম জিয়া তার ২৮ বছরের আবাসস্থল ছেড়ে যান। তিনি অভিযোগ করেন যে তাকে বলপ্রয়োগে বাড়ি থেকে বের করে দেয়া হয়েছে। তবে সরকারি পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, তিনি স্বেচ্ছায় বাড়ি ত্যাগ করেছেন। স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সাল থেকে অ্যাডজুট্যান্ট জেনারেল হিসেবে জিয়াউর রহমানের সাথে শহীদ মইনুল সড়কের ৬ নম্বর বাড়িতে ওঠেন খালেদা জিয়া। ১৯৮১ সালের ৩০ মে রাষ্ট্রপতি জিয়া চট্টগ্রামে এক ব্যর্থ সেনা অভ্যুত্থানে নিহত হলে ১২ জুন তৎকালীন অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি আবদুস সাত্তার সেনানিবাসের ওই বাড়িটি খালেদার নামে বরাদ্দ দেন। পদক ও সম্মাননা: ২০১১ সালের ২৪ শে মে নিউ জার্সি স্টেট সিনেটে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে ’ফাইটার ফর ডেমোক্রেসি’ পদক প্রদান করা হয়। যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট সিনেট কর্তৃক কোন বিদেশিকে এ ধরনের সম্মান প্রদানের ঘটনা এটাই ছিল প্রথম। পরবর্তীতে ২০১৮ সালের ৩১ জুলাই তাকে ‘মাদার অব ডেমোক্রেসি’ সম্মাননা দেয় কানাডিয়ান হিউম্যান রাইটস ইন্টারন্যাশনাল অর্গানাইজেশন (সিএইচআরআইও) নামের একটি সংগঠন। ৮ ফেব্রুয়ারি ২০২২ সালে গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি ওই দাবি করার পাশাপাশি কানাডার এই প্রতিষ্ঠানটির দেওয়া ক্রেস্ট ও সনদপত্র সাংবাদিকদের সামনে উপস্থাপন করেন।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের ধারণা খালেদা জিয়া যদি একজন অত্যন্ত শক্তিশালী ও জনপ্রিয় নেত্রী না হতেন এবং অতীতে দেশের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্বে না থাকতেন, তাহলে তাকে এই বৃদ্ধা বয়সে কারাবাস করতে হতো না।

এ সরকারের প্রতি জনগণের প্রত্যাশা অনেক। রাষ্ট্র সংস্কারের যে লক্ষ্যে অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নিয়েছে, তা রাতারাতি বাস্তবায়ন সম্ভব নয়, একথাও প্রত্যেক নাগরিককে মনে রাখতে হবে। অন্তর্বর্তী সরকার সব ষড়যন্ত্র নস্যাৎ করে দেশকে এগিয়ে নিতে সক্ষম হবে, এটাই প্রত্যাশা। সময়মত দেশে বিদেশে সকলের কাছে গ্রহনযোগ্য,  নিরপেক্ষ নির্বাচন উপহার দিবে সকলের নিকট হতে প্রশাংসা কুড়াবেন। এজন্য  অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টাসহ উপদেষ্টাদের যথেষ্ট সময় দিতে হবে কেউ হাউকাউ, কথায় কথায় বিরোধীতা করলে হবে না। যারা করতে চান তারা ১৮ বছর কি করেছেন,  কোথায় ছিলেন?   ভারতে বসে ঘোষটি বেগম একের পর এক সরকারের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের বীজবপন করছেন, ভারতীয় মিডিয়া মিথ্যা তথ্য, রংচং করে প্রচার করছেন, যা শক্তহাতে দমন করছেন বর্তমান সরকার। ফলে সফল হতে পারছেনা।

বিএনপি একটি বড় দল দীর্ঘদিন ক্ষমতার বাইরে থাকায় দলের ভিতরে থাকা কিছু নেতা পাতিনেতা বিগতদিনে আওয়ামী লীগ নেতার সাথে গোপন আঁতাত করে সুবিধা নিয়ে দল ভাঙ্গার চেষ্টা করেছেন,  বিএনপি নেতাদের  নামে মামলা করিয়ে জেলে পাঠাতে সাহায্য করেছেন,  কিছুকিছু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের  প্রধানগণ আওয়ামী লীগ দলীয় পদপদবী গ্রহন করে মাদার অফ ম্যাফিয়া অধীনে অনুষ্ঠিত সকল নির্বাচনে নিয়ম ভঙ্গ করে প্রিজাইডিং অফিসারের দায়িত্ব পালন করেছেন। লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়ে  হাজার হাজার ব্যালট পেপারে আগাম নৌকায় সীল মেরে আওয়ামী লীগ প্রার্থীদের বিশাল ভোটের ব্যবধানে জয়লাভ করিয়েছেন তাদের  বিরুদ্ধে  ওইসব   সুবিধাবাদী বিএনপির নেতারা রহস্যজনক কারণে কোন কথা বলছেন না।  মামলা করলেও তাদের আসামি করছেন না। পদপদবীধারী আওয়ামীলীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ, মহিলালীগের নেতারা নিয়োগবানিজ্য, টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজী, হাটঘাট, করিডোর, কাষ্টম, সাব-রেজিষ্টার অফিস, বালুমহল, জলমহল, খাসপুকুরসহ বিভিন্নভাবে কোটি কোটি কাল টাকার সম্পদ গড়েছেন তাদেরকে আসামি না করে বিএনপির ত্যাগি নেতাকর্মী, সিনিয়ার সাংবাদিক, কলামিষ্টসহ তৃনমূল বিএনপির কর্মী, শ্রমিক, কলেজ শিক্ষকেও আসামি করেছেন ফলে দলের ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে। এ নজীরবিহীন ঘটনাটি ঘটেছে রাজশাহীর গোদাগাড়ী মডেল থানার ২টি মামলায়। রাজশাহী জেলা কৃষকদলের যুগ্ম আহ্বায়ক আবদুল হামিদ বাবলু গত ২৫ আগস্ট আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীসহ প্রায় ৪৫ জন নামসহ অজ্ঞাত আরো ৫০০-৬০০ জনের নামে মামলা করেন। বাদী নিজের  স্বার্থ হাসিলের জন্য ও ব্যাক্তিগত আক্রোশের জেরে বিএনপির ৬-৭জন নেতাকর্মীর নামে মামলা দিয়েছে সেখানে বিএনপির কর্মী কলেজ শিক্ষক সুমনকে আসামি করা হয়েছে।  একই কায়দায়  গত ২৮/০৮/২৪ ইং তারিখে গোগ্রাম ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি আবদুর রউফ দিলীপ গোদাগাড়ী মডেল থানায় মামলা করেন যার নম্বর ৩২, ওই মামলায় ১৮ জনের নাম উল্লেখ করে ৫০/৬০ কে  আসামি করা হয়েছে। এ মামলায় বিএনপি পরিবারের সদস্য, দৈনিক ইনকিলাবের সাংবাদিক, কলামিস্ট, প্রধান শিক্ষক মোঃ হায়দার আলীসহ কয়েকজনকে   অসৎ উদ্দেশ্যে জড়ানো হয়েছে। অথচ  যারা আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গসংগঠনের পদধারী, মামলার বাড়ীর পাশে অবস্থান নির্বাচনী অফিস, বাড়ী ভ্যাংচুর, আগুন দিয়েছেন তাদের আসামি করা হয়নি। যারা লাখ লাখ টাকা চাঁদাবাজী করে আওয়ামীলীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ, কৃষকলীগ, আওয়ামী লীগের নেতা ও মেয়র, উপজেলার চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান, ইউনিয়ন চেয়ারম্যান,  এমপি ফারুর চৌধুরীর ডান হাত বাম বলে খ্যাত, থিম ওমর প্লাজায় বসে কোটি টাকার নিয়োগ বানিজ্য, খাস পুকুর বানিজ্য, খাদ্য গুদামসহ বিভিন্ন প্রকল্প করে লুটে নিয়েছেন কোটি কোটি, ওমর প্লাজায় ফ্লাট, দোকন বাড়ী কিনেছেন  রহস্যজনক কারণে মামলার আসামি করা হয়নি।  এমনকি আওয়ামী লীগ দলীয় পদ নিয়ে প্রত্যেক নির্বাচনে প্রিজাইডিং অফিসার হয়ে রাতের আঁধারে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়ে হাজার হাজার  ব্যালট পেপারে নৌকায়  সিল মেরেছিল তাদেরকেও আসামি করা হয়নি। অবিলম্বে মামলা থেকে ওই সাংবাদিক, বিএনপির নেতা কর্মী নাম প্রত্যাহারের দাবী জানিয়ে বিএনপির ত্যাগি নেতাকর্মী গোদাগাড়ী উপজেলা সদরসহ বিভিন্ন স্থানে মানববন্ধন, বিক্ষোভ ও প্রতিবাদ সমাবেশ করে মিথ্যা মামলাবাজ ওই দুই নেতার বহিস্কার দাবী করেছেন। উপজেলা বিএনপির সভাপতি আবদুস সালাম শাওয়াল,  সাধারণ সম্পাদক আনারুল ইসলাম কেন্দ্রীয়কমিটিসহ বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ করেছেন।  ওই সব সুবিধা নেতারা কেন্দ্র, বিভাগ, জেলা, উপজেলার সিদ্ধান্ত ছাড়াই ব্যক্তিস্বার্থে বিভিন্ন অপকর্মে জড়িয়ে পড়ছেন। এ চিত্র শুধু গোদাগাড়ীতে নয়, দেশের অন্য অন্য স্থানে ঘটছে, বিএনপির দুগ্রুপের সংঘর্ষে কয়েকজন মারা গেছে, আহত হয়েছেন অনেকে,  কিছু সুবিধাবাদী  নেতা বহিষ্কার হচ্ছে,  তাদের বিরুদ্ধে হত্যা, লুটপাট,

চাঁদাবাজীসহ বিভিন্ন মামলা হচ্ছে যা   পত্রিকা, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম, আনলাইন নিউজ পোটাল, টিভি নিউজসহ বিভিন্ন মাধ্যমে জানা গেছে। ওই সব সুবিধাবাদী বিএনপির নেতাদের থামাতে হবে এখনই। তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নিতে হবে। দলের মধ্যে দ্বন্দ্বসৃষ্টিকারী নেতাদের দ্রুত চিহ্নিত করে কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে হবে। কেন না এরা বিএনপি তথা খালেদা জিয়ার ভাল চান না এরা তৃতীয় পক্ষের হয়ে কিংবা শেখ হাসিনা, আওয়ামী লীগের হয়ে বিগত দিনে এবং এখনও কাজ করছেন বলে প্রতিয়মান হচ্ছে। নিউ জার্সি স্টেট সিনেটে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে ’ফাইটার ফর ডেমোক্রেসি’ পদক প্রদান করা হয়েছে। গণমানুষের দল বিএনপিকে ১৮ কোটি মানুষের একমাত্র আস্তার প্রতীক হিসেবে দাঁড় করিয়ে বিশাল ভোটের ব্যবধানে জয়লাভ করিয়ে বেগম খালেদা জিয়াকে  আবার প্রধানমন্ত্রীর চিয়ারে বসাতে হবে এবং শান্তিতে নোবেলজয়ী করাতে হবে।  এ কঠিন কাজ ২ টি সহজ করতে হলে দলের অভ্যন্তরীণ কোন্দল,  দ্বিধা দ্বন্দ্ব ভুলে গিয়ে সবাইকে এক সাথে কাজ করতেই হবে। দলের যে মনোনয়ন পাবে সে ধানের শীষের প্রার্থী, তার সঙ্গে সব নেতাকর্মীদের একযোগে কাজ করে বিজয় ছিঁনিয়ে আন্তে হবে। এটা খুব একটা কঠিন কাজ হবে না যদি সাবই চীনের প্রাচীরের মত কঠিন ঐক্য থাকে। (লেখক:  সিনিয়র সাংবাদিক, কলামিষ্ট)

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

গৃহবধু হতে ফাইটার ফর ডেমোক্রেসি’‘ বাংলাদেশের নেলসন ম্যান্ডেলা, শান্তিতে নোবেল কী পাবেন?

Update Time : 12:32:22 pm, Monday, 9 September 2024

মোঃ হায়দার আলী

দক্ষিণ আফ্রিকার বর্ণবাদবিরোধী আন্দোলনের অবিসংবাদিত নেতা নেলসন ম্যান্ডেলার সঙ্গে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার তুলনা করেছেন দলটি নেতা কর্মীরা। তারা বলেছেন, দক্ষিণ আফ্রিকা তথা সারাবিশ্বেও মানুষের নিকট বর্ণবাদ বিরোধী নেতা নেলসন ম্যান্ডেলা ছিলেন অত্যন্ত শ্রদ্ধেয় ও অনুকরণীয় ব্যক্তিত্ব। নেলসন ম্যান্ডেলা ছিলেন এমন একজন মহান নায়ক, যিনি নিজের সুখ স্বাচ্ছন্দ্য বিসর্জন দিয়ে কেবল মাত্র মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠা এবং বর্ণবাদের বিরুদ্ধে সোচ্চার থেকেছেন। আর এ কারণে তাঁকে জীবনের সিংহভাগ কারান্তরীণ থাকতে হয়েছে। ’শত নির্যাতনের মাঝেও নিজের মনোবল অটুট রেখেছেন তবু ও অন্যায় ও অনিয়মের কাছে মুহুর্তেও জন্য ও মাথা নত করেন নি।’

গৃহবধু থেকে দলের চেয়ারম্যান, প্রধানমন্ত্রী, বিরোধীদলীয় নেতা, আপোষহীন নেত্রী, তেমনী স্বৈরাচার হাসিনার কাছে কোন সময়ের জন্য মাথা নত করেন নি। তিনি  গণতন্ত্রের জন্য জেল খাটছেন। বাড়ি হারিয়েছেন, আদরের ছোট ছেলেকে হারিয়েছেন এই গণতন্ত্রের জন্য। আগামীর   বিশ্বনেতা হবেন বেগম খালেদা জিয়া। বিশ্ববাসীর কাছে গণতন্ত্রের মাতা হিসেবে পরিচিত হবেন, শান্তিতে নোবেল পাওয়ার দাবী রাখে  দলটির নেতারা জোর দিয়ে বলছেন।

৫ আগস্ট শেখ হাসিনার ক্ষমতাচ্যুতির পরদিনই রাষ্ট্রপতির আদেশে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার শাস্তি মওকুফ ও মুক্তির ঘোষণা দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। জিয়া অরফানেজ ও জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলায় তাকে এ দন্ড দিয়েছিলেন আদালত।

দলের প্রধানের মুক্তিতে ১৮ বছর ক্ষমতার বাইরে থাকা দল বিএনপির নেতা  কর্মীদের মধ্যে এখন বেশ চাঙ্গা ভাব। খালেদা জিয়ার মুক্তির পরদিন ৭ আগস্টেই এক মহাসমাবেশের আয়োজন করে বিএনপি। জেলমুক্ত খালেদা জিয়াকে কেন্দ্র করে রাজনীতিতে এখন বেশ শক্তিশালী হয়ে উঠেছে দলটি। দীর্ঘদিন আটক থাকা নেতাকর্মীরা ছাড়া পেয়ে রাজনীতির ময়দানে সক্রিয় হয়েছেন।

বেগম খালেদা জিয়া (জন্ম: আগস্ট ১৫ ১৯৪৫ ), জন্মগত নাম খালেদা খানম পুতুল, একজন বাংলাদেশি রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব যিনি ১৯৯১-১৯৯৬ সাল এবং ২০০১-২০০৬ সাল পর্যন্ত তিনি প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি বাংলাদেশের প্রথম মহিলা প্রধানমন্ত্রী ও প্রধানমন্ত্রী রূপে মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশগুলোর মাঝে দ্বিতীয় মহিলা সরকারপ্রধান (বেনজির ভুট্টোর পর)। তার স্বামী জিয়াউর রহমানের শাসনকালে তিনি ফার্স্ট লেডি ছিলেন। তিনি বর্তমানে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) চেয়ারপার্সন ও দলনেত্রী, যা তার স্বামী জিয়াউর রহমান কর্তৃক ১৯৭৮ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়।

১৯৮২ সালে সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল এইচ এম এরসাদের নেতৃত্বে পরিচালিত সামরিক অভ্যুত্থানের পর থেকে ১৯৯০ সালে সামরিক স্বৈরশাসক হিসেবে এরশাদের পতনের পূর্ব পর্যন্ত খালেদা জিয়া গণতন্ত্রের জন্য চলমান আন্দোলনে নেতৃত্বদানের মাধ্যমে সহায়তা করেন। ১৯৯১ এর নির্বাচনে বিএনপি জয়ী হওয়ায় তিনি প্রধানমন্ত্রী হন। ১৯৯৬-এর স্বল্পস্থায়ী সরকারেও তিনি দায়িত্বপালন করেন, যখন কিনা অন্য দলগুলো ওই নির্বাচনকে বর্জন করেছিল। ১৯৯৬ সালের পরবর্তী সাধারণ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসে। খালেদা জিয়ার দল পুনরায় ক্ষমতায় আসে ২০০১ সালে। ১৯৯১, ১৯৯৬ ও ২০০১ সালের নির্বাচনে তিনি নিজস্ব ৫টি সংসদীয় আসনের সবগুলোতেই জয়ী হন যেটা বাংলাদেশের ইতিহাসে বিরল দৃষ্টান্ত।

ফোর্বস সাময়িকীর বিশ্বের ১০০ ক্ষমতাবান নারী নেতৃত্বের তালিকায়  ২০০৪ সালে জিয়ার অবস্থান ১৪তম, ২০০৫ সালে ২৯তম, ও ২০০৬ সালে ৩৩তম। ২০০৬ সালে তার সরকারের নির্ধারিত শাসনকাল শেষ হওয়ার পর, ২০০৭ সালে নির্ধারিত নির্বাচন রাজনৈতিক সহিংসতা ও অন্তর্দ্বন্দ্বের কারণে বিলম্বিত হয়, ফলশ্রুতিতে তত্ত্বাবধায়ক সরকার কর্তৃক সামরিক পদ্ধতিতে রক্তপাতবিহীন ক্ষমতা অধিগ্রহণ করা হয়। ওই সরকারের সময়কালে, খালেদা জিয়া তার দুই সন্তানসহ দুর্নীতির দায়ে অভিযুক্ত হন।

গত দুই দশকের অধিকাংশ সময়ে, খালেদা জিয়ার প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন আওয়ামী লীগ নেত্রী শেখ হসিনা  ১৯৯১ সাল থেকে তারা অনুক্রমিকভাবে দিনের ভোট রাতে করে, প্রকাশ্যে নৌকায় সীল মেরে  ভোটার বিহীন নির্বাচনে প্রধানমন্ত্রী হয়ে আসছিলেন। গত ৫ আগস্ট ছাত্র জনতার আন্দোলনে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে পালিয়ে ভারতে অবস্থান করছেন। সে সাথে পালিয়ে গেছেন হেবিওয়েট মন্ত্রী, এমপি, মেয়র, উপজেলা চেয়ারম্যান আওয়ামী লীগের নেতা পাতিনেতারা। এরপর থেকে সব চেয়ে জনপ্রিয়তায় শীর্ষে থাকা  দেশ নেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার কথা মানুষের মুখে উচ্চারিত হচ্ছে, প্রচার হচ্ছে আকাশে বাতাসে, টেকনাফ থেকে তেতুলিয়া পর্যন্ত। ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারিতে, খালেদা জিয়া দুর্নীতির দায়ে পাঁচ বছরের কারাবাসের দন্ডপ্রাপ্ত হন। এতে তিনি প্রধানমন্ত্রী থাকাকালীন একটি এতিমখানা ট্রাস্ট গঠনের সময় অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে  দোষী সাব্যস্ত হন। কারাবাস ভোগ করেন।

বর্নাঢ্য রাজনৈতিক কর্মময় জীবনঃ ১৯৮১ সালের ৩০ মে এক সামরিক অভ্যুত্থানে জিয়াউর রহমান নিহত হন। এরপর বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের  বিভিন্ন স্তরের নেতা কর্মীদের আহ্বানে গৃহবধু থেকে তিনি ১৯৮২ সালের ৩ জানুয়ারি বিএনপিতে যোগ দেন। ১৯৮২ সালের ২৪ মার্চ সেনাপ্রধান লেফটেন্যান্ট জেনারেল এরশাদ বিচারপতি আবদুস সাত্তারকে ক্ষমতাচ্যুত করেন। বেগম জিয়া এর বিরোধিতা করেন। ১৯৮৩ সালের মার্চ মাসে তিনি বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান হন। ১৯৮৩ সালের ১ এপ্রিল দলের বর্ধিত সভায় তিনি প্রথম বক্তৃতা করেন। বিচারপতি সাত্তার অসুস্থ হয়ে পড়লে তিনি দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপার্সন হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৮৪ সালের ১০ মে দলের চেয়ারপার্সন নির্বাচনে তিনি বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন। তার নেতৃত্বেই মূলত বিএনপির পূর্ণ বিকাশ হয়। তিনি গৃহবধু থেকে দলের নেতৃত্বে এসে দলকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যান এবং আর পেছনে ফিরে দেখতে হয় নি।

এরশাদবিরোধী আন্দোলন: ১৯৮৩ সালের বেগম জিয়ার নেতৃত্বে সাত দলীয় ঐক্যজোট গঠিত হয়। একই সময় এরশাদের সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে আন্দোলন আরম্ভ হয়। বেগম জিয়া প্রথমে বিএনপিকে নিয়ে ১৯৮৩ এর সেপ্টেম্বর থেকে ৭ দলীয় ঐক্যজোটের মাধ্যমে এরশাদ বিরোধী আন্দোলনের সূচনা করেন। একই সময় তার নেতৃত্বে সাত দল আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন পনেরো দলের সাথে যৌথভাবে আন্দোলনের কর্মসূচির সূত্রপাত করে। ১৯৮৬ সাল পর্যন্ত পাঁচ দফা আন্দোলন চলতে থাকে। কিন্তু ১৯৮৬ সালের ২১ মার্চ রাতে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা এরশাদের অধীনে নির্বাচনে অংশ নেয়ার সিদ্ধান্ত নিলে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনে বাধার সৃষ্টি হয়। ১৫ দল ভেঙে ৮ দল ও ৫ দল হয়। ৮ দল নির্বাচনে যায়। এরপর বেগম জিয়ার নেতৃত্বে ৭ দল, পাঁচ দলীয় ঐক্যজোট আন্দোলন চালায় এবং নির্বাচন প্রত্যাখ্যান করে। ১৯৮৭ সাল থেকে খালেদা জিয়া এরশাদ হটাও শীর্ষক এক দফার আন্দোলনের সূত্রপাত করেন। এর ফলে এরশাদ সংসদ ভেঙে দেন। তারপর পুনরায় ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের উপক্রম হয়। অবশেষে দীর্ঘ আট বছর অবিরাম, নিরলস ও আপোসহীন সংগ্রামের পর ১৯৯১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত সংসদ নির্বাচনে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে বিএনপি বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন। সেই নির্বাচনে খালেদা জিয়া মোট পাঁচটি আসনে অংশ নিয়ে পাঁচটিতেই জয়লাভ করেন।

প্রধানমন্ত্রিত্বের ১ম মেয়াদকাল:১৯৯১ সালের ১৯ মার্চ বেগম খালেদা জিয়া পঞ্চম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারে প্রধানমন্ত্রী নিযুক্ত হন। তার সরকার দেশে সংসদীয় পদ্ধতির সরকার প্রতিষ্ঠিত করে। ২ এপ্রিল তিনি সংসদে সরকারের পক্ষে এই বিল উত্থাপন করেন। একই দিন তিনি তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রধান বিচারপতি শাহাবুদ্দিন আহমেদ কে স্বপদে ফিরে যাবার ব্যবস্থা করে একাদশ সংশোধনী বিল আনেন। ৬ আগস্ট ১৯৯১ সালের সংসদে সর্বসম্মতিক্রমে দুটি বিল পাশ হয়।

প্রধানমন্ত্রিত্বের ২য় মেয়াদকাল: ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি ষষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচন হয়। যা পরবর্তীতে ৯৬ এর একদলীয় নির্বাচন হিসেবে গণ্য হয়। সকল বিরোধীদলের আপত্তির পরও খালেদা জিয়া ও তার দল এই একক নির্বাচন করেন। আওয়ামী লীগসহ সব বিরোধী দল এই নির্বাচন বয়কট করে। এই সংসদ মাত্র ১৫ দিন স্থায়ী হয়। খালেদা জিয়া এই সংসদেরও  প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। প্রবল গণ আন্দোলন ও বর্হিবিশ্বের চাপে ষষ্ঠ জাতীয় সংসদে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিল পাস হয় এবং খালেদা জিয়া পদত্যাগ করেন।

বিরোধীদলীয় নেতৃত্বের ১ম মেয়াদকাল: ১৯৯৬ সালে সপ্তম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি মোট ১১৬ আসনে জয় লাভ করে, যা সরকার গঠনে যথেষ্ট ছিল না। আওয়ামী লীগ মোট ১৪৭ আসন লাভ করে, তারা জাতীয় পার্টির সমর্থন নিয়ে সরকার গঠন করে। বিএনপি সপ্তম সংসদে বাংলাদেশের ইতিহাস সর্ববৃহৎ বিরোধী দল হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। বেগম খালেদা জিয়া আওয়ামী লীগের পাঁচ বছর শাসনকালে সংসদে বিরোধী দলনেত্রী ছিলেন।

প্রধানমন্ত্রিত্বের ৩য় মেয়াদকাল: অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে   বিএনপি বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী, ইসলামি ঐক্যজোট ও জাতীয় পার্টির সাথে চারদলীয় ঐক্যজোট গঠন করে। ২০০১ সালের ১ অক্টোবর সংসদ নির্বাচনে চারদলীয় ঐক্যজোট বিপুল ভোটে জয়ী হয়ে সরকার গঠন করে। খালেদা জিয়া এই সংসদেও প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেছেন। ২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর এই সংসদের মেয়াদ শেষ হয়।

বিরোধীদলীয় নেতৃত্বের ২য় মেয়াদকাল ২০০৮ সালের ডিসেম্বর মাসে অনুষ্ঠিত নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে চারদলীয় ঐক্যজোট বিপুল ভোটের ব্যবধানে পরাজিত হয়। মহাজোটের প্রায় ২৬০ টি আসনের বিপরীতে চার দলীয় ঐক্যজোট মাত্র ৩২টি আসন লাভ করে।

আটক: ১৯৮২ সালের ৩ জানুয়ারি বিএনপির প্রাথমিক সদস্য রূপে দলে যোগ দেবার পর থেকে মোট পাঁচ বার তিনি আটক হন। এরশাদবিরোধী আন্দোলনের সময় ১৯৮৩ সালের ২৮ নভেম্বর, ১৯৮৪ সালের ৩ মে, ১৯৮৭ সালের ১১ নভেম্বর আটক হন। তিনি ২০০৭ সালের সেপ্টেম্বর ৩ তারিখে দুর্নীতির অভিযোগে পুত্রসহ আটক হন। ২০০৮ সালের ১১ই সেপ্টেম্বার তিনি সর্বোচ্চ বিচারালয়ের নির্দেশে মুক্তিলাভ করেন। তত্ত্বাবধায়ক সরকার কর্তৃক বন্দী হবার পর দীর্ঘ এক বছর সাত দিন কারাগারে অবস্থানকালে তার বিরুদ্ধে চলতে থাকা কোন অভিযোগেরই উল্লেখযোগ্য কোন অগ্রগতি হয়নি এবং চলতে থাকা তদন্তে তার বিরুদ্ধে কোন অভিযোগই প্রমাণিত হয়নি। ৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় ২ কোটি ১০ লাখ টাকা আত্মসাতের দায়ে তার ৫ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড হয়। এরপরই তাকে বন্দী করে পরিত্যক্ত কেন্দ্রীয় কারাগার কাশিমপুরে নিয়ে যাওয়া হয়।

সেনানিবাসের বাসা ত্যাগ: ১৩ নভেম্বর ২০১০ ইং বেগম জিয়া তার ২৮ বছরের আবাসস্থল ছেড়ে যান। তিনি অভিযোগ করেন যে তাকে বলপ্রয়োগে বাড়ি থেকে বের করে দেয়া হয়েছে। তবে সরকারি পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, তিনি স্বেচ্ছায় বাড়ি ত্যাগ করেছেন। স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সাল থেকে অ্যাডজুট্যান্ট জেনারেল হিসেবে জিয়াউর রহমানের সাথে শহীদ মইনুল সড়কের ৬ নম্বর বাড়িতে ওঠেন খালেদা জিয়া। ১৯৮১ সালের ৩০ মে রাষ্ট্রপতি জিয়া চট্টগ্রামে এক ব্যর্থ সেনা অভ্যুত্থানে নিহত হলে ১২ জুন তৎকালীন অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি আবদুস সাত্তার সেনানিবাসের ওই বাড়িটি খালেদার নামে বরাদ্দ দেন। পদক ও সম্মাননা: ২০১১ সালের ২৪ শে মে নিউ জার্সি স্টেট সিনেটে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে ’ফাইটার ফর ডেমোক্রেসি’ পদক প্রদান করা হয়। যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট সিনেট কর্তৃক কোন বিদেশিকে এ ধরনের সম্মান প্রদানের ঘটনা এটাই ছিল প্রথম। পরবর্তীতে ২০১৮ সালের ৩১ জুলাই তাকে ‘মাদার অব ডেমোক্রেসি’ সম্মাননা দেয় কানাডিয়ান হিউম্যান রাইটস ইন্টারন্যাশনাল অর্গানাইজেশন (সিএইচআরআইও) নামের একটি সংগঠন। ৮ ফেব্রুয়ারি ২০২২ সালে গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি ওই দাবি করার পাশাপাশি কানাডার এই প্রতিষ্ঠানটির দেওয়া ক্রেস্ট ও সনদপত্র সাংবাদিকদের সামনে উপস্থাপন করেন।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের ধারণা খালেদা জিয়া যদি একজন অত্যন্ত শক্তিশালী ও জনপ্রিয় নেত্রী না হতেন এবং অতীতে দেশের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্বে না থাকতেন, তাহলে তাকে এই বৃদ্ধা বয়সে কারাবাস করতে হতো না।

এ সরকারের প্রতি জনগণের প্রত্যাশা অনেক। রাষ্ট্র সংস্কারের যে লক্ষ্যে অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নিয়েছে, তা রাতারাতি বাস্তবায়ন সম্ভব নয়, একথাও প্রত্যেক নাগরিককে মনে রাখতে হবে। অন্তর্বর্তী সরকার সব ষড়যন্ত্র নস্যাৎ করে দেশকে এগিয়ে নিতে সক্ষম হবে, এটাই প্রত্যাশা। সময়মত দেশে বিদেশে সকলের কাছে গ্রহনযোগ্য,  নিরপেক্ষ নির্বাচন উপহার দিবে সকলের নিকট হতে প্রশাংসা কুড়াবেন। এজন্য  অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টাসহ উপদেষ্টাদের যথেষ্ট সময় দিতে হবে কেউ হাউকাউ, কথায় কথায় বিরোধীতা করলে হবে না। যারা করতে চান তারা ১৮ বছর কি করেছেন,  কোথায় ছিলেন?   ভারতে বসে ঘোষটি বেগম একের পর এক সরকারের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের বীজবপন করছেন, ভারতীয় মিডিয়া মিথ্যা তথ্য, রংচং করে প্রচার করছেন, যা শক্তহাতে দমন করছেন বর্তমান সরকার। ফলে সফল হতে পারছেনা।

বিএনপি একটি বড় দল দীর্ঘদিন ক্ষমতার বাইরে থাকায় দলের ভিতরে থাকা কিছু নেতা পাতিনেতা বিগতদিনে আওয়ামী লীগ নেতার সাথে গোপন আঁতাত করে সুবিধা নিয়ে দল ভাঙ্গার চেষ্টা করেছেন,  বিএনপি নেতাদের  নামে মামলা করিয়ে জেলে পাঠাতে সাহায্য করেছেন,  কিছুকিছু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের  প্রধানগণ আওয়ামী লীগ দলীয় পদপদবী গ্রহন করে মাদার অফ ম্যাফিয়া অধীনে অনুষ্ঠিত সকল নির্বাচনে নিয়ম ভঙ্গ করে প্রিজাইডিং অফিসারের দায়িত্ব পালন করেছেন। লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়ে  হাজার হাজার ব্যালট পেপারে আগাম নৌকায় সীল মেরে আওয়ামী লীগ প্রার্থীদের বিশাল ভোটের ব্যবধানে জয়লাভ করিয়েছেন তাদের  বিরুদ্ধে  ওইসব   সুবিধাবাদী বিএনপির নেতারা রহস্যজনক কারণে কোন কথা বলছেন না।  মামলা করলেও তাদের আসামি করছেন না। পদপদবীধারী আওয়ামীলীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ, মহিলালীগের নেতারা নিয়োগবানিজ্য, টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজী, হাটঘাট, করিডোর, কাষ্টম, সাব-রেজিষ্টার অফিস, বালুমহল, জলমহল, খাসপুকুরসহ বিভিন্নভাবে কোটি কোটি কাল টাকার সম্পদ গড়েছেন তাদেরকে আসামি না করে বিএনপির ত্যাগি নেতাকর্মী, সিনিয়ার সাংবাদিক, কলামিষ্টসহ তৃনমূল বিএনপির কর্মী, শ্রমিক, কলেজ শিক্ষকেও আসামি করেছেন ফলে দলের ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে। এ নজীরবিহীন ঘটনাটি ঘটেছে রাজশাহীর গোদাগাড়ী মডেল থানার ২টি মামলায়। রাজশাহী জেলা কৃষকদলের যুগ্ম আহ্বায়ক আবদুল হামিদ বাবলু গত ২৫ আগস্ট আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীসহ প্রায় ৪৫ জন নামসহ অজ্ঞাত আরো ৫০০-৬০০ জনের নামে মামলা করেন। বাদী নিজের  স্বার্থ হাসিলের জন্য ও ব্যাক্তিগত আক্রোশের জেরে বিএনপির ৬-৭জন নেতাকর্মীর নামে মামলা দিয়েছে সেখানে বিএনপির কর্মী কলেজ শিক্ষক সুমনকে আসামি করা হয়েছে।  একই কায়দায়  গত ২৮/০৮/২৪ ইং তারিখে গোগ্রাম ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি আবদুর রউফ দিলীপ গোদাগাড়ী মডেল থানায় মামলা করেন যার নম্বর ৩২, ওই মামলায় ১৮ জনের নাম উল্লেখ করে ৫০/৬০ কে  আসামি করা হয়েছে। এ মামলায় বিএনপি পরিবারের সদস্য, দৈনিক ইনকিলাবের সাংবাদিক, কলামিস্ট, প্রধান শিক্ষক মোঃ হায়দার আলীসহ কয়েকজনকে   অসৎ উদ্দেশ্যে জড়ানো হয়েছে। অথচ  যারা আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গসংগঠনের পদধারী, মামলার বাড়ীর পাশে অবস্থান নির্বাচনী অফিস, বাড়ী ভ্যাংচুর, আগুন দিয়েছেন তাদের আসামি করা হয়নি। যারা লাখ লাখ টাকা চাঁদাবাজী করে আওয়ামীলীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ, কৃষকলীগ, আওয়ামী লীগের নেতা ও মেয়র, উপজেলার চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান, ইউনিয়ন চেয়ারম্যান,  এমপি ফারুর চৌধুরীর ডান হাত বাম বলে খ্যাত, থিম ওমর প্লাজায় বসে কোটি টাকার নিয়োগ বানিজ্য, খাস পুকুর বানিজ্য, খাদ্য গুদামসহ বিভিন্ন প্রকল্প করে লুটে নিয়েছেন কোটি কোটি, ওমর প্লাজায় ফ্লাট, দোকন বাড়ী কিনেছেন  রহস্যজনক কারণে মামলার আসামি করা হয়নি।  এমনকি আওয়ামী লীগ দলীয় পদ নিয়ে প্রত্যেক নির্বাচনে প্রিজাইডিং অফিসার হয়ে রাতের আঁধারে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়ে হাজার হাজার  ব্যালট পেপারে নৌকায়  সিল মেরেছিল তাদেরকেও আসামি করা হয়নি। অবিলম্বে মামলা থেকে ওই সাংবাদিক, বিএনপির নেতা কর্মী নাম প্রত্যাহারের দাবী জানিয়ে বিএনপির ত্যাগি নেতাকর্মী গোদাগাড়ী উপজেলা সদরসহ বিভিন্ন স্থানে মানববন্ধন, বিক্ষোভ ও প্রতিবাদ সমাবেশ করে মিথ্যা মামলাবাজ ওই দুই নেতার বহিস্কার দাবী করেছেন। উপজেলা বিএনপির সভাপতি আবদুস সালাম শাওয়াল,  সাধারণ সম্পাদক আনারুল ইসলাম কেন্দ্রীয়কমিটিসহ বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ করেছেন।  ওই সব সুবিধা নেতারা কেন্দ্র, বিভাগ, জেলা, উপজেলার সিদ্ধান্ত ছাড়াই ব্যক্তিস্বার্থে বিভিন্ন অপকর্মে জড়িয়ে পড়ছেন। এ চিত্র শুধু গোদাগাড়ীতে নয়, দেশের অন্য অন্য স্থানে ঘটছে, বিএনপির দুগ্রুপের সংঘর্ষে কয়েকজন মারা গেছে, আহত হয়েছেন অনেকে,  কিছু সুবিধাবাদী  নেতা বহিষ্কার হচ্ছে,  তাদের বিরুদ্ধে হত্যা, লুটপাট,

চাঁদাবাজীসহ বিভিন্ন মামলা হচ্ছে যা   পত্রিকা, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম, আনলাইন নিউজ পোটাল, টিভি নিউজসহ বিভিন্ন মাধ্যমে জানা গেছে। ওই সব সুবিধাবাদী বিএনপির নেতাদের থামাতে হবে এখনই। তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নিতে হবে। দলের মধ্যে দ্বন্দ্বসৃষ্টিকারী নেতাদের দ্রুত চিহ্নিত করে কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে হবে। কেন না এরা বিএনপি তথা খালেদা জিয়ার ভাল চান না এরা তৃতীয় পক্ষের হয়ে কিংবা শেখ হাসিনা, আওয়ামী লীগের হয়ে বিগত দিনে এবং এখনও কাজ করছেন বলে প্রতিয়মান হচ্ছে। নিউ জার্সি স্টেট সিনেটে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে ’ফাইটার ফর ডেমোক্রেসি’ পদক প্রদান করা হয়েছে। গণমানুষের দল বিএনপিকে ১৮ কোটি মানুষের একমাত্র আস্তার প্রতীক হিসেবে দাঁড় করিয়ে বিশাল ভোটের ব্যবধানে জয়লাভ করিয়ে বেগম খালেদা জিয়াকে  আবার প্রধানমন্ত্রীর চিয়ারে বসাতে হবে এবং শান্তিতে নোবেলজয়ী করাতে হবে।  এ কঠিন কাজ ২ টি সহজ করতে হলে দলের অভ্যন্তরীণ কোন্দল,  দ্বিধা দ্বন্দ্ব ভুলে গিয়ে সবাইকে এক সাথে কাজ করতেই হবে। দলের যে মনোনয়ন পাবে সে ধানের শীষের প্রার্থী, তার সঙ্গে সব নেতাকর্মীদের একযোগে কাজ করে বিজয় ছিঁনিয়ে আন্তে হবে। এটা খুব একটা কঠিন কাজ হবে না যদি সাবই চীনের প্রাচীরের মত কঠিন ঐক্য থাকে। (লেখক:  সিনিয়র সাংবাদিক, কলামিষ্ট)