স্টাফ রিপোর্টার॥ ছয় দফা দাবি আদায়ে সারা দেশের মতো রংপুরেও মহাসমাবেশ করেছে পলিটেকনিকের শিক্ষার্থীরা। গতকাল দুপুর আড়াইটার দিকে রংপুর পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট চত্বরে এ কর্মসূচি পালন করেন তারা। এতে রংপুরসহ আশপাশের জেলার বিভিন্ন কারিগরি প্রতিষ্ঠানের বর্তমান ও প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা অংশ নেন। সমাবেশে শিক্ষার্থীরা জানান, দেশের কারিগরি সেক্টর দীর্ঘদিন ধরে নানা সমস্যায় জর্জরিত। চাকরির বাজারে বৈষম্য, অব্যবস্থাপনা শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎকে অনিশ্চিত করে তুলছে। তাদের এই ছয় দফা শুধু শিক্ষার্থীদের জন্য নয়, বরং দেশের সামগ্রিক প্রযুক্তি ও শিল্পখাতের উন্নয়নের সঙ্গে সম্পৃক্ত।
মহাসমাবেশে বক্তব্য রাখেন- রংপুর পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের ইলেকট্রনিক বিভাগের শিক্ষার্থী সাব্বির হোসেন এবং ইলেকট্রোমেডিকেল বিভাগের সপ্তম ব্যাচের শিক্ষার্থী মোয়াজ হোসেন।
বক্তারা বলেন, আমাদের এই দাবি শুধু নিজেদের নয়, আগামী প্রজন্মের কারিগরি শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ গঠনের জন্য। এই সমাবেশের পরবর্তী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে দাবিগুলো মেনে নেওয়া না হলে তারা দেশব্যাপী বৃহৎ কর্মসূচি ঘোষণা করবেন বলে হুঁশিয়ারি দেন। তারা সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন, ন্যায্য দাবি মেনে নিয়ে কারিগরি শিক্ষার গুণগত মান উন্নয়নে পদক্ষেপ গ্রহণ করবে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এমনটাই প্রত্যাশা করছেন তারা।
কারিগরি শিক্ষার্থীদের ছয় দাবি জুনিয়র ইন্সট্রাক্টর পদে ক্রাফট ইন্সট্রাক্টরদের অবৈধ পদোন্নতির রায় হাইকোর্ট কর্তৃক বাতিল করতে হবে। পাশাপাশি, ক্রাফট ইন্সট্রাক্টর পদবি পরিবর্তন ও মামলার সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের স্থায়ীভাবে চাকরিচ্যুত করতে হবে। ২০২১ সালে রাতের আঁধারে নিয়োগপ্রাপ্ত ক্রাফট ইন্সট্রাক্টরদের নিয়োগ সম্পূর্ণভাবে বাতিল এবং সেই বিতর্কিত নিয়োগবিধি অবিলম্বে সংশোধন করতে হবে।
উপ-সহকারী প্রকৌশলী ও সমমানের (১০ম গ্রেড) পদ চার বছর মেয়াদি ডিপ্লোমা ইন ইঞ্জিনিয়ারিং ও মনোটেকনোলজি (সার্ভেয়িং) থেকে পাস করা শিক্ষার্থীদের জন্য সংরক্ষিত থাকা সত্ত্বেও যেসব সরকারি, রাষ্ট্রায়ত্ত, স্বায়ত্তশাসিত ও স্বশাসিত প্রতিষ্ঠানে ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের নিম্নস্থ পদে নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে, তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিতে হবে।
কারিগরি সেক্টর পরিচালনায় পরিচালক, সহকারী পরিচালক, বোর্ড চেয়ারম্যান, উপসচিব, পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক ও অধ্যক্ষসহ সংশ্লিষ্ট সব পদে কারিগরি শিক্ষাবহির্ভূত জনবল নিয়োগ নিষিদ্ধ করতে হবে এবং তা আইনানুগভাবে নিশ্চিত করতে হবে। এ পদগুলোতে অনতিবিলম্বে কারিগরি শিক্ষায় শিক্ষিত জনবল নিয়োগ এবং সব শূন্য পদে দক্ষ শিক্ষক ও ল্যাব সহকারী নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করতে হবে।
কারিগরি শিক্ষায় বৈষম্য ও দুরবস্থা দূর করার পাশাপাশি দক্ষ জনসম্পদ তৈরিতে ‘কারিগরি ও উচ্চ শিক্ষা মন্ত্রণালয়‘ নামে স্বতন্ত্র মন্ত্রণালয় প্রতিষ্ঠা করে দ্রুত সময়ের মধ্যে কারিগরি শিক্ষা সংস্কার কমিশন গঠন করতে হবে।
পলিটেকনিক ও মনোটেকনিক ইনস্টিটিউট থেকে পাস করা শিক্ষার্থীদের উচ্চশিক্ষার সুযোগের লক্ষ্যে একটি উন্নত মানের টেকনিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করতে হবে। পাশাপাশি, নির্মাণাধীন চারটি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে (নড়াইল, নাটোর, খাগড়াছড়ি ও ঠাকুরগাঁও) পলিটেকনিক ও মনোটেকনিক থেকে পাস করা শিক্ষার্থীদের জন্য অস্থায়ী ক্যাম্পাস ও ডুয়েটের আওতাভুক্ত অ্যাকাডেমিক কার্যক্রম পরিচালনার মাধ্যমে আগামী সেশন থেকে শতভাগ সিটে ভর্তির সুযোগ নিশ্চিত করতে হবে।