বীরগঞ্জ (দিনাজপুর) প্রতিনিধি॥ চিরচেনা তীক্ষ দৃষ্টি সম্পূর্ন বিশালাকার পাখি শকুন। বাংলাদেশের বিলুপ্তপ্রায় এই বিরল প্রজাতির অসুস্থ অবস্থায় উদ্ধারকৃত এসব শকুন এখন দিনাজপুরের বীরগঞ্জ উপজেলার ভোগনগর ইউনিয়নের সিংড়া জাতীয় উদ্যানে পরিচর্যা ও পূনর্বাসন কেন্দ্রে প্রকৃতিতে অবমুক্তির অপেক্ষায়।
উত্তারাঞ্চলের বিভিন্ন এলাকায় হিমালিয়ানসহ বিভিন্ন বিরল প্রজাতির উদ্ধারকৃত শকুন সিংড়া জাতীয় উদ্যানের পরিচর্যা ও পূনর্বাসন কেন্দ্রে আনা হচ্ছে। এনিয়ে উদ্ধারকৃত বিরল প্রজাতির ৬টি শকুন এই কেন্দ্রে রয়েছে। একসময় পুরোপুরি সুস্থ্য হলে এসব উদ্ধারকৃত শকুনকে রক্ষা ও প্রকৃতির ভারসাম্য রক্ষায় সুস্থ করে প্রতি বছরের মার্চ-এপ্রিলের দিকে প্রকৃতিতে অবমুক্ত করা হয়। এসময় শকুনকে স্যাটালাইট ট্যাকিং এর আওতায় আনা হয়। এবার ঈদের পর বা আগে এসব শকুন প্রকৃতিতে অবমুক্ত করা হবে জানালেন বীরগঞ্জ সিংড়া জাতীয় উদ্যানের বনবীট কর্মকর্তা গয়া প্রসাদ পাল।
এরা আকাশের অনেক ওপরে ওড়ে প্রশস্থ ডানার ওপর ভর করে। এদের মাথা, গলা বা ঘাড়ে পালক নেই। এদের প্রবল ডানা ঝাপটা আর সমস্বর বিকট শব্দে মানুষজন বুঝতে পারে শকুন এসেছে। কিন্তু এখন আর সেই চিরচেনা শকুনের দেখা পাওয়া যায় না। বট, পাকুড় কিংবা অশ্বত্থের মতো বড় বড় গাছে সাধারণত লোকচক্ষুর অন্তরালে শকুন বাসা বাঁধে। এরা সাধারণত গুহায়, গাছের কোটরে বা পর্বতের চূড়ায় ১-৩টি সাদা বা ফ্যাকাশে ডিম পাড়ে। বিভিন্ন প্রাণীর মৃতদেহ শকুনের দল মুহূর্তেই খেয়ে সাবাড় করে ফেলে। ফলে পচন ধরা গলিত মৃতদেহগুলো থেকে সংক্রামক রোগ ছড়াতে পারে না। শকুন দেখতে খুব সুন্দর পাখি তা নয়। কিন্তু নিঃসন্দেহে এরা মানবসমাজের জন্য উপকারী পাখি।
বীরগঞ্জ উপজেলার সিংড়া জাতীয় উদ্যানে পরিচর্যা ও পূনর্বাসন কেন্দ্রে চিকিৎসাধীন ৬ শকুনের জন্য গড়ে প্রতিদিন বয়লার মুরগী দেয়া হয়। এছাড়াও স্যালাইন,পানি ওষুধ দেয়া হয় বলে জানায় শকুনের দেখভালের তদারককারী বেলাল হোসেন। প্রতিটি শকুনকে খাদ্য হিসেবে দু’দিন পর পর দেয়া হয় আঁধা কেজি বয়লার মুরগী।
বীরগঞ্জ সিংড়া জাতীয় উদ্যানের বনবীট কর্মকর্তা গয়া প্রসাদ পাল জানান, হিমালয় এবং ভুটানে শীতের প্রকোপ বাড়লে দল বেঁধে শকুনগুলো আসে এবং বড় বড় গাছে আশ্রয় নেয়। বিলুপ্ত প্রায় এই শকুন বিশেষ করে শীতের সময় অন্য এলাকা থেকে দিনাজপুরসহ এ অঞ্চলে অসুস্থ্য বা খাদ্যাভাবে ক্লান্ত অবস্থায় আসে। ঠিকমত উড়তে না পারায় সেসব শকুনকে উদ্ধার করে সিংড়া জাতীয় উদ্যানে পরিচর্যা ও পূনর্বাসন কেন্দ্রে আনা হয়। একসময় পুরোপুরি সুস্থ্য হলে সেটিকে প্রকৃতিতে আবার ছেড়ে দেওয়া হয়। প্রতি বছরের মার্চ-এপ্রিলের দিকে এসব শকুনকে প্রকৃতিতে অবমুক্ত করে দেয়া হয়। বর্তমানে এখানে এধরনের ৬টি শকুন রয়েছে। অবশ্য আমাদের পরিচর্যা কেন্দ্রের বাইরেও আরও ৪টি শকুন রয়েছে। এরাকে পূর্বেই অবমুক্ত করা হলেও খাওয়া পাওয়ায় এবং মায়ার জোরে এখনো রয়েছে। তবে এরাও চলে যাবে একসময়। বীরগঞ্জ সিংড়া জাতীয় উদ্যানে গত ৭বছর ধরে দেশে বিলুপ্ত ও বিপন্ন প্রায় শকুনকে বাচাঁতে আইইউসিএন বাংলাদেশ ও বন বিভাগ যৌথভাবে একটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে।
উল্লেখ্য, উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন এলাকায় আহত অবস্থায় শকুন উদ্ধার করে বীরগঞ্জ সিংড়া জাতীয় উদ্যান কর্তৃপক্ষের নিকট হস্তান্তর করা হয়। হিমালয়ের পাদদেশে দিনাজপুর, ঠাকুরগাঁও এবং পঞ্চগড় জেলার অবস্থানের কারণে এই এলাকায় এখনো কিছু শকুন দেখা যায়। অনেক সময় এগুলো অতিথি হয়ে আসে।তবে মানুষ যদি সচেতন হয় এবং শকুন উদ্ধার করে অথবা বনবিভাগকে সংবাদ দেয়, তাহলে উদ্ধার করে পুনর্বাসন কেন্দ্রে পরিচর্যার মাধ্যমে তাদের বিলুপ্তি থেকে রক্ষা করা সম্ভব। ২০১২সালে উত্তরবঙ্গের একমাত্র শকুন উদ্ধার ও পরিচর্যা কেন্দ্রটি স্থাপন করা হয় এবং ২০১৪সাল হতে আন্তর্জাতিক শকুন সচেতনতা দিবস উৎযাপন করা হয়।