5:08 pm, Wednesday, 12 March 2025

গোবিন্দগঞ্জ পৌরসভার ড্রেনের বর্জ্যে ভরাট হওয়ায় নাব্যতা হারাচ্ছে করতোয়া নদী

  • Reporter Name
  • Update Time : 09:27:24 am, Tuesday, 4 March 2025
  • 7 Time View

গোবিন্দগঞ্জ (গাইবান্ধা) প্রতিনিধি॥ গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ পৌর এলাকার মধ্য দিয়ে বয়ে যাওয়া করতোয়া নদীতে পৌরসভার ড্রেনের ভেসে আসা বর্জ্যে ভরাট হওয়ায় নাব্যতা হারিয়ে ফেলছে এক সময়ের প্রবাহমান এই নদী। ড্রেনের পানির সাথে আসা বিভিন্ন কলকারখানার ময়লা, বাসাবাড়ি ও হাটবাজারের বর্জ্যে পচা দুর্গন্ধ ও মশা-মাছির প্রকোপ বেড়ে যাওয়ায় অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে নদীর ধারে বসবাসবকারী মানুষজন। মাঝে মধ্যেই নানা ধরনের রোগ-বালাইয়ে আক্রান্ত হচ্ছেন ওই এলাকার শিশু ও বয়স্ক লোকেরা । এই দুরাবস্থা থেকে পরিত্রাণ পেতে ড্রেনের পানি নিষ্কাশনের পথ পরির্র্বতনের দাবী জানিয়েছেন স্থানীয়রা।

গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত করতোয়া নদীটি পাশ্ববর্তী বগুড়া শহরের ওপর দিয়ে সিরাজগঞ্জ জেলার যমুনা নদীতে গিয়ে মিলে গেছে। এক সময় এই নদীতে মাছ ধরে ওই এলাকাসহ আশপাশের অসংখ্য জেলে পরিবার জীবিকা নির্বাহ করতো। সেই সাথে নদীতে চলাচল করতো নানা ধরণের মালবাহী নৌকা। যে কারণে দীর্ঘ এই নদী পথের বিভিন্ন স্থানে গড়ে ওঠে বেশকিছু  বাণিজ্য কেন্দ্র এবং জেলে পল্লী। কিন্তু কালের বিবর্তনের ফলে নদী দখল-দূষণসহ নানা কারণে এর প্রবাহ বাধাগ্রস্থ হওয়ায় হারিয়ে গেছে সেই নদী পথ। এখন কেবল বন্যার সময় দেখা মেলে নদীর পানি প্রবাহের। বন্যার মৌসুম ছাড়া বছরের অন্য সময়ে নদীটি পানি শুন্য থাকে। এছাড়াও বিভিন্ন স্থানে আটকে থাকা পানিতে পাওয়া যেতো দেশী প্রজাতির নানা ধরনের মাছ। কিন্তু গোবিন্দগঞ্জ পৌরসভার বিশাল আকৃতির একটি ড্রেন করতোয়া নদীর সাথে সংযুক্ত করার কারনে ক্রমশই এই নদীর তলদেশ ভরাট হয়ে যাচ্ছে। স্থানীয় লোকজনের অভিযোগ, পৌর কর্তৃপক্ষ কর্তৃক অপরিকল্পিতভাবে নির্মিত এই ড্রেনে পৌর শহরের সকল বাসাবাড়ী, দোকান হোটেল, বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক, হাট-বাজারের পশু জবাইয়ের বর্জ্যসহ অটোরাইস মিলের আবর্জনা ও ছাই এসে করতোয়া নদীর তলদেশ প্রায় ভরাট হতে চলেছে।

করতোয়া নদীর পাড়ের পৌর এলাকার চরপাড়া গ্রামের আব্দুস ছোবহান বলেন, পৌর সভা কর্তৃক নির্মিত এই ড্রেনের সংযোগ দেয়ার আগে এই নদীর পানিতে মাছ পাওয়া যেতো এবং নদীর দু’পাড়ের লোকজন সেখানে গোসল করতো। কিন্তু এখন এই ড্রেনের দুগর্ন্ধযুক্ত পচা পানি নদীতে আসায় নদীর আশপাশের এলাকার পরিবেশ দূষণ করছে। একই এলাকার শ্রমিক নেতা আব্দুল মমিন জানান, করতোয়া নদীতে দূষিত পানি থাকার কারনে সেখানে মাছ তো দূরের কথা- কোন জলজ প্রাণীও বসবাস করতে পারেনা। এ ছাড়াও অটোরাইস মিলের দুর্গন্ধযুক্ত ময়লা ও পচা পানির সাথে ভেসে আসা ছাইয়ে নদীর তলদেশ ভরাট হয়ে স্থায়ী ভাবে নদীর পানি প্রবাহ বন্ধ হতে চলেছে। অবিলম্বে এই ড্রেনটির মুখ বন্ধ করে বিকল্প পথে এসব বর্জ্য নির্গতের ব্যবস্থা করে নদীর গতিপথ স্বাভাবিক করতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিকট জোর দাবী জানান তিনি। এ বিষয়ে গোবিন্দগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার সৈয়দা ইয়াসমিন সুলতানার কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ওই নদী এলাকা সরেজমিনে পরিদর্শন করে স্থানীয় সূধীমহলের পরামর্শ নিয়ে এ ব্যাপারে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Popular Post

শিল্পপতি রহিম উদ্দিন ভরসার ৫ম মৃত্যুবার্ষিকী পালিত

× How can I help you?

গোবিন্দগঞ্জ পৌরসভার ড্রেনের বর্জ্যে ভরাট হওয়ায় নাব্যতা হারাচ্ছে করতোয়া নদী

Update Time : 09:27:24 am, Tuesday, 4 March 2025

গোবিন্দগঞ্জ (গাইবান্ধা) প্রতিনিধি॥ গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ পৌর এলাকার মধ্য দিয়ে বয়ে যাওয়া করতোয়া নদীতে পৌরসভার ড্রেনের ভেসে আসা বর্জ্যে ভরাট হওয়ায় নাব্যতা হারিয়ে ফেলছে এক সময়ের প্রবাহমান এই নদী। ড্রেনের পানির সাথে আসা বিভিন্ন কলকারখানার ময়লা, বাসাবাড়ি ও হাটবাজারের বর্জ্যে পচা দুর্গন্ধ ও মশা-মাছির প্রকোপ বেড়ে যাওয়ায় অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে নদীর ধারে বসবাসবকারী মানুষজন। মাঝে মধ্যেই নানা ধরনের রোগ-বালাইয়ে আক্রান্ত হচ্ছেন ওই এলাকার শিশু ও বয়স্ক লোকেরা । এই দুরাবস্থা থেকে পরিত্রাণ পেতে ড্রেনের পানি নিষ্কাশনের পথ পরির্র্বতনের দাবী জানিয়েছেন স্থানীয়রা।

গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত করতোয়া নদীটি পাশ্ববর্তী বগুড়া শহরের ওপর দিয়ে সিরাজগঞ্জ জেলার যমুনা নদীতে গিয়ে মিলে গেছে। এক সময় এই নদীতে মাছ ধরে ওই এলাকাসহ আশপাশের অসংখ্য জেলে পরিবার জীবিকা নির্বাহ করতো। সেই সাথে নদীতে চলাচল করতো নানা ধরণের মালবাহী নৌকা। যে কারণে দীর্ঘ এই নদী পথের বিভিন্ন স্থানে গড়ে ওঠে বেশকিছু  বাণিজ্য কেন্দ্র এবং জেলে পল্লী। কিন্তু কালের বিবর্তনের ফলে নদী দখল-দূষণসহ নানা কারণে এর প্রবাহ বাধাগ্রস্থ হওয়ায় হারিয়ে গেছে সেই নদী পথ। এখন কেবল বন্যার সময় দেখা মেলে নদীর পানি প্রবাহের। বন্যার মৌসুম ছাড়া বছরের অন্য সময়ে নদীটি পানি শুন্য থাকে। এছাড়াও বিভিন্ন স্থানে আটকে থাকা পানিতে পাওয়া যেতো দেশী প্রজাতির নানা ধরনের মাছ। কিন্তু গোবিন্দগঞ্জ পৌরসভার বিশাল আকৃতির একটি ড্রেন করতোয়া নদীর সাথে সংযুক্ত করার কারনে ক্রমশই এই নদীর তলদেশ ভরাট হয়ে যাচ্ছে। স্থানীয় লোকজনের অভিযোগ, পৌর কর্তৃপক্ষ কর্তৃক অপরিকল্পিতভাবে নির্মিত এই ড্রেনে পৌর শহরের সকল বাসাবাড়ী, দোকান হোটেল, বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক, হাট-বাজারের পশু জবাইয়ের বর্জ্যসহ অটোরাইস মিলের আবর্জনা ও ছাই এসে করতোয়া নদীর তলদেশ প্রায় ভরাট হতে চলেছে।

করতোয়া নদীর পাড়ের পৌর এলাকার চরপাড়া গ্রামের আব্দুস ছোবহান বলেন, পৌর সভা কর্তৃক নির্মিত এই ড্রেনের সংযোগ দেয়ার আগে এই নদীর পানিতে মাছ পাওয়া যেতো এবং নদীর দু’পাড়ের লোকজন সেখানে গোসল করতো। কিন্তু এখন এই ড্রেনের দুগর্ন্ধযুক্ত পচা পানি নদীতে আসায় নদীর আশপাশের এলাকার পরিবেশ দূষণ করছে। একই এলাকার শ্রমিক নেতা আব্দুল মমিন জানান, করতোয়া নদীতে দূষিত পানি থাকার কারনে সেখানে মাছ তো দূরের কথা- কোন জলজ প্রাণীও বসবাস করতে পারেনা। এ ছাড়াও অটোরাইস মিলের দুর্গন্ধযুক্ত ময়লা ও পচা পানির সাথে ভেসে আসা ছাইয়ে নদীর তলদেশ ভরাট হয়ে স্থায়ী ভাবে নদীর পানি প্রবাহ বন্ধ হতে চলেছে। অবিলম্বে এই ড্রেনটির মুখ বন্ধ করে বিকল্প পথে এসব বর্জ্য নির্গতের ব্যবস্থা করে নদীর গতিপথ স্বাভাবিক করতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিকট জোর দাবী জানান তিনি। এ বিষয়ে গোবিন্দগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার সৈয়দা ইয়াসমিন সুলতানার কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ওই নদী এলাকা সরেজমিনে পরিদর্শন করে স্থানীয় সূধীমহলের পরামর্শ নিয়ে এ ব্যাপারে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।