1:52 am, Thursday, 21 November 2024

পাবলিক লাইব্রেরির সামনে লোহার দন্ডটি কিসের

  • Reporter Name
  • Update Time : 06:07:46 pm, Wednesday, 20 November 2024
  • 1 Time View

স্টাফ রিপোর্টার॥  ১৮৩২ সালে যখন পাবলিক লাইব্রেরি স্থাপন করা হয় তখন মাঠের দুই পাশে দুটি লোহার দন্ড স্থাপন করা হয়। ওই লোহার দন্ডে ওপরের বাড়তি দুই পাশে বাতি জ্বালানো হত। তখন বিদ্যুত বাতির কথা কল্পনা করা যেত না। ভেন্ডি অথবা ভেরেন্ডা নামের এক প্রকার গাছের তেল দিয়ে বাতি জ্বালিয়ে আলোকিত করা হত পাবলিক লাইব্রেরির মাঠকে। সারা রাত বাতি জ্বলত। বাতি জ্বালানো দুটি লোহার দণ্ড থাকলে  বর্তমানে রয়েছে একটি । আরেকটি কে বা কারা নিয়ে  গেছেন তা কেউ বলথে পারেন না। ওপরের এসব তথ্য জানিয়েছেন প্রবীণ ব্যক্তিত্ব রংপুর জেলা সুজনের সভাপতি বীরমুক্তিযোদ্ধা আকবর হোসেন।

রংপুর পাবলিক লাইব্রেরির সামনে ১৯২ বছর থেকে ঠাঁয় দাঁড়িয়ে রয়েছে বাতি জ্বালানীয়া লৌহদন্ডটি। অনেকে জানেন না এই লোহার দণ্ডটি কিসের। অনেকে লোহার এই দণ্ডটির সামনে দাঁড়িয়ে সেলফি তোলেন।  তবে অনেকের কাছে এই প্রশ্ন মাঠের মাঝে এটি কে কেন স্থাপন করেছিলেন।  নগরীর প্রাণ কেন্দ্রে রংপুর পাবলিক লাইব্রেরিরে সামনে রয়েছে একটি বিশাল মাঠ। এর পূর্ব পাশে রয়েছে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার।  পশ্চিমে রয়েছে টাউনহল ও গণগ্রন্থাগার। পাবলিক লাইব্রেরি পিছনে আধুনিক শিল্পকলা একাডেমি। এছাড়াও এই চত্বরে রয়েছে ৮/১০ সাহিত্য – সংস্কৃতি সংগঠন। পাবলিক লাইব্রেরি মাঠে এখনো বিভিন্ন মেলা জনসভা হয়ে আসছে। সন্ধ্যা থেকে গভীর রাত পর্যন্ত বকুল তলায় চলে জমজমাট আড্ডা। এত আয়োজনের মধ্যে প্রায় ২০০ বছর থেকে টিকে রয়েছে লোহার এই পিলারটি।  পিলারের ওপরের অংশে দুই হাতের মত রয়েছে।

দেশের মধ্যে রংপুর পাবলিক লাইব্রেরি প্রাচীনতম একটি গ্রহন্থাগার। ১৮৩২ সালে কুন্ডীর জমিদাররা এই লাইব্রেরি প্রতিষ্ঠা করেন। এর পরে রাজমোহন রায় চৌধুরী প্রতিষ্ঠানটির সার্বিক আর্থিক দায়িত্ব গ্রহণ করেন। পরবর্তীকালে তুষভান্ডারের জমিদার রমণীমোহন রায় চৌধুরী এবং কাকিনার  জমিদার মহিমারঞ্জন রায় চৌধুরী গ্রন্থাগারটির পৃষ্ঠপোষকতা করেন। এখানে ৩০ হাজারে বেশি বই, পান্ডুলিপি, পুঁথি, উৎকীর্ণলিপি ও প্রত্নতাত্ত্বিক ধ্বংসাবশেষ সংগৃহিত ও সংরক্ষিত ছিল। পরবর্তিতে ১৮৫৪ সালে  কাকিনার জমিদার রাজা মহিমারঞ্জন রায় চৌধুরী ১ একর ১৮ শতক জমি পাবলিক লাইব্রেরির জন্য দান করেন। তখন থেকে এটি স্বতন্ত্র প্রতিষ্ঠান হিসেবে কাজ করছে। ১৯৩৫ সালে ভারত সরকার এটিকে সরকারি প্রতিষ্ঠান হিসেবে অধিগ্রহণ করে। ১৯৭১ সালে বংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন এটির ব্যাপক ক্ষতি হয়। এছাড়া এর মূল্যবান সংগ্রহসমূহ ও অংশ ১৮৯৭ সালের ভূমিকম্পে এবং  ১৯০৩ সালে এক অগ্নিকান্ডের ফলে বিনষ্ট হয়। প্রায় ১৯২  বছর বয়সি এই প্রতিষ্ঠানটি সাথে আজও দাঁড়িয়ে রয়েছে বাতি জ্বালানীয়া লোহার দন্ডটি।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Popular Post

মমতাজ শিরীন ভরসার শোক প্রকাশ

পাবলিক লাইব্রেরির সামনে লোহার দন্ডটি কিসের

Update Time : 06:07:46 pm, Wednesday, 20 November 2024

স্টাফ রিপোর্টার॥  ১৮৩২ সালে যখন পাবলিক লাইব্রেরি স্থাপন করা হয় তখন মাঠের দুই পাশে দুটি লোহার দন্ড স্থাপন করা হয়। ওই লোহার দন্ডে ওপরের বাড়তি দুই পাশে বাতি জ্বালানো হত। তখন বিদ্যুত বাতির কথা কল্পনা করা যেত না। ভেন্ডি অথবা ভেরেন্ডা নামের এক প্রকার গাছের তেল দিয়ে বাতি জ্বালিয়ে আলোকিত করা হত পাবলিক লাইব্রেরির মাঠকে। সারা রাত বাতি জ্বলত। বাতি জ্বালানো দুটি লোহার দণ্ড থাকলে  বর্তমানে রয়েছে একটি । আরেকটি কে বা কারা নিয়ে  গেছেন তা কেউ বলথে পারেন না। ওপরের এসব তথ্য জানিয়েছেন প্রবীণ ব্যক্তিত্ব রংপুর জেলা সুজনের সভাপতি বীরমুক্তিযোদ্ধা আকবর হোসেন।

রংপুর পাবলিক লাইব্রেরির সামনে ১৯২ বছর থেকে ঠাঁয় দাঁড়িয়ে রয়েছে বাতি জ্বালানীয়া লৌহদন্ডটি। অনেকে জানেন না এই লোহার দণ্ডটি কিসের। অনেকে লোহার এই দণ্ডটির সামনে দাঁড়িয়ে সেলফি তোলেন।  তবে অনেকের কাছে এই প্রশ্ন মাঠের মাঝে এটি কে কেন স্থাপন করেছিলেন।  নগরীর প্রাণ কেন্দ্রে রংপুর পাবলিক লাইব্রেরিরে সামনে রয়েছে একটি বিশাল মাঠ। এর পূর্ব পাশে রয়েছে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার।  পশ্চিমে রয়েছে টাউনহল ও গণগ্রন্থাগার। পাবলিক লাইব্রেরি পিছনে আধুনিক শিল্পকলা একাডেমি। এছাড়াও এই চত্বরে রয়েছে ৮/১০ সাহিত্য – সংস্কৃতি সংগঠন। পাবলিক লাইব্রেরি মাঠে এখনো বিভিন্ন মেলা জনসভা হয়ে আসছে। সন্ধ্যা থেকে গভীর রাত পর্যন্ত বকুল তলায় চলে জমজমাট আড্ডা। এত আয়োজনের মধ্যে প্রায় ২০০ বছর থেকে টিকে রয়েছে লোহার এই পিলারটি।  পিলারের ওপরের অংশে দুই হাতের মত রয়েছে।

দেশের মধ্যে রংপুর পাবলিক লাইব্রেরি প্রাচীনতম একটি গ্রহন্থাগার। ১৮৩২ সালে কুন্ডীর জমিদাররা এই লাইব্রেরি প্রতিষ্ঠা করেন। এর পরে রাজমোহন রায় চৌধুরী প্রতিষ্ঠানটির সার্বিক আর্থিক দায়িত্ব গ্রহণ করেন। পরবর্তীকালে তুষভান্ডারের জমিদার রমণীমোহন রায় চৌধুরী এবং কাকিনার  জমিদার মহিমারঞ্জন রায় চৌধুরী গ্রন্থাগারটির পৃষ্ঠপোষকতা করেন। এখানে ৩০ হাজারে বেশি বই, পান্ডুলিপি, পুঁথি, উৎকীর্ণলিপি ও প্রত্নতাত্ত্বিক ধ্বংসাবশেষ সংগৃহিত ও সংরক্ষিত ছিল। পরবর্তিতে ১৮৫৪ সালে  কাকিনার জমিদার রাজা মহিমারঞ্জন রায় চৌধুরী ১ একর ১৮ শতক জমি পাবলিক লাইব্রেরির জন্য দান করেন। তখন থেকে এটি স্বতন্ত্র প্রতিষ্ঠান হিসেবে কাজ করছে। ১৯৩৫ সালে ভারত সরকার এটিকে সরকারি প্রতিষ্ঠান হিসেবে অধিগ্রহণ করে। ১৯৭১ সালে বংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন এটির ব্যাপক ক্ষতি হয়। এছাড়া এর মূল্যবান সংগ্রহসমূহ ও অংশ ১৮৯৭ সালের ভূমিকম্পে এবং  ১৯০৩ সালে এক অগ্নিকান্ডের ফলে বিনষ্ট হয়। প্রায় ১৯২  বছর বয়সি এই প্রতিষ্ঠানটি সাথে আজও দাঁড়িয়ে রয়েছে বাতি জ্বালানীয়া লোহার দন্ডটি।