ঢাকা: দেশের আর্থিক খাত ভয়াবহ চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে বলে মন্তব্য করেছেন অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ। মঙ্গলবার (১৯ নভেম্বর) সচিবালয়ের অর্থ মন্ত্রণালয়ের মাল্টিপারপাস হলে ‘অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ১০০ দিন পূর্তি’ উপলক্ষে ডাকা সংবাদ সম্মেলনে এমন মন্তব্য করেন।
সংবাদ সম্মেলনে এনবিআরের চেয়ারম্যান, অর্থ বিভাগের সচিব, ব্যাংকিং ডিভিশনের সচিব এবং অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগে (ইআরডি) সচিব উপস্থিত ছিলেন। অর্থ উপদেষ্টা বলেন, দুর্নীতি-অনিয়ম বন্ধ ও প্রয়োজনীয় প্রকল্প বাস্তবায়নের গতি বাড়ানোর চেষ্টা করছে সরকার। তবে অত্যাবশ্যকীয় ছাড়া সবধরনের অপ্রয়োজনীয় ব্যয় নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করা হচ্ছে। সবধরনের গাড়ি কেনা বন্ধ করা হয়েছে। এই মুহূর্তে রাজস্ব বাড়ানোই বড় চ্যালেঞ্জ। এটা করা না গেলে উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড বাধাগ্রস্ত হবে। বিগত সরকারের আমলে রাজনৈতিক বিবেচনায় নেওয়া প্রকল্পগুলোর গুরুত্ব পুনরায় খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলেও জানান অর্থ উপদেষ্টা।
কোনও ব্যাংক বন্ধ করা হবে না: সয়বাদ সম্মেলনে ব্যাংকিং খাত প্রসঙ্গেও কথা বলেন সাবেক এই গভর্নর। তিনি বলেন, বিগত সরকারের আমলে আইন অমান্য করাই ছিল ব্যাংকিং খাতের বড় সমস্যা। সেখানে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের দেখভালেরও ঘাটতি ছিল। যে কারণে ব্যাংকিং খাতের এই দুরাবস্থা সৃষ্টি হয়েছে। এই প্রেক্ষাপটে কিছু দুর্বল ব্যাংক চিহ্নিত করা হয়েছে। তাদের আর্থিক সহায়তা দেওয়া হবে। তবে কোনোভাবেই কোনও ব্যাংক বন্ধ করা হবে না।
বাজারে মূল্যস্ফীতি প্রসঙ্গে উপদেষ্টা বলেন, মূলস্ফীতি তো একদিনে হয়নি। এর আগে ৬০ হাজার কোটি টাকা ছাপানো হয়েছে; যা মূলস্ফীতি বৃদ্ধির অন্যতম কারণ। এছাড়াও বিভিন্ন প্রকল্পে অহেতুক খরচ করা হয়েছে। পদ্মা সেতু করার ফলে মানুষের যোগাযোগ সহজ হয়েছে, তবে এর সুফল এখনও আর্থিক খাতে যুক্ত হওয়া শুরু হয়নি। এসব কারণেই মূল্যস্ফীতি বেড়েছে। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে কয়েকটি পণ্যের শুল্ক কমিয়েছে সরকার; যা আগামী রমজান মাস পর্যন্ত বলবৎ থাকবে।
খেলাপি ঋণ আদায়ে অর্থ ঋণ আদালত আরও সক্রিয় হবে: খেলাপি ঋণ আদায়ে অর্থ ঋণ আদালত আরও সক্রিয় করা হবে বলেও জানান অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ। একই সঙ্গে হাইকোর্টে হওয়া রিট মামলা দ্রুত নিষ্পত্তি করার পদক্ষেপ নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন তিনি। তবে খেলাপি ঋণ আদায়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরকে বিচারিক ক্ষমতা দেওয়া হবে না। খেলাপি ঋণ আদায়ে গভর্নরকে বিচারিক ক্ষমতা দেওয়া হবে কি না? সাংবাদিকদের পক্ষ থেকে এমন প্রশ্ন করা হলে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, খেলাপি ঋণ আদায়ে অর্থ ঋণ আদালত আরও সক্রিয় করা হবে। তবে গভর্নরকে বিচারিক ক্ষমতা দেওয়া ঠিক হবে না। তিনি বলেন, হাইকোর্টের রিট মামলা নিষ্পত্তি করার জন্য দুইটি বেঞ্চ রয়েছে। এ বিষয়ে অ্যাটর্নি জেনারেল ও গভর্নরের সঙ্গে আমার আলোচনা হয়েছে, যাতে এই বেঞ্চগুলো আগামী তিন মাস শুধু রিট মামলাগুলো পরিচালনা করে। তিনি বলেন, ভালো ব্যবসায়ীদের ভীত হওয়ার কোনো কারণ নাই। যারা ঋণ নিয়ে ঠিকমতো ফেরত দেন এবং ঠিকমতো কর দেন, তাদের কোনো সমস্যা হবে না। তারাই ভীতু হয়ে আছে যারা বিগত সরকারের সময়ে নানাভাবে অনেক কিছু করেছে। আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব নাজমা মোবারক এ প্রসঙ্গে বলেন, যেসব দুর্বল ব্যাংক আমানতকারীদের টাকা ফেরত দিতে পারছে না, তারা যাতে আমানতকারীদের টাকা ফেরত দিতে পারে সেজন্য খুব দ্রুত উদ্যোগ নেওয়া হবে।
আমাদের সাফল্যের সূর্য উদয় হয়েছে: সংবাদ সম্মেলনে অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, আমাদের (অন্তর্বর্তী সরকার) সাফল্যের সূর্য উদয় হয়েছে এবং আমাদের অর্জন খুব একটা খারাপ নয়। আমরা একটি পায়ের ছাপ রেখে যাবো। আমরা এমন জায়গাগুলো দিয়ে হাঁটবো যা রাস্তা তৈরির দিকনির্দেশ করবে।
অর্থ উপদেষ্টা বলেন, আমরা একটি পায়ের ছাপ রেখে যাবো। আমরা কিছু সংস্কার করে যাবো। পরবর্তীতে যারা আসবেন তারা বুঝবেন যে এখান থেকে রাস্তা তৈরি করতে হবে। একটি কল্যাণমুখী রাষ্ট্র করতে আমাদের প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। তিনি বলেন, আমাদের সাফল্যের সূর্য উদয় হয়েছে। আমরা যে একেবারে খারাপ করেছি তা নয়। আমাদের অর্জন খুব একটা খারাপ না। তিনি আরও বলেন, বিশ্বব্যাংক এবং এডিবি আমাদের সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছে। এর আগে এমন আশ্বাস বা সহযোগিতার প্রতিশ্রুতি বাংলাদেশ পায়নি। সুতরাং এটা সরকারের অন্যতম একটি সফলতা।