৬৪ জনের তালিকা সম্বলিত গুম ও অপহরণের শিকার ব্যক্তিদের জীবিত ফেরত ও নির্যাতনের বিরুদ্ধে বিচার পেতে প্রধান বিচারপতি বরাবর স্মারকলিপি দিয়েছিলেন স্বজনরা। পরে প্রধান বিচারপতির নির্দেশে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য ৬৪ জনের গুমের ওই তালিকা ‘জোরপূর্বক গুম হওয়া ব্যক্তিদের সন্ধানের নিমিত্তে’ গঠিত তদন্ত কমিশনে পাঠানো হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (১২ সেপ্টেম্বর) এ তথ্য জানিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন।
সুপ্রিম কোর্ট থেকে জানানো হয়, বিগত ২৮ সেপ্টেম্বর বিভিন্ন সময়ে আইন শৃঙ্খলা প্রয়োগকারী সংস্থা কর্তৃক গুম হওয়া ব্যক্তিদের স্বজনরা ‘গুম পরিবারের সদস্য’ এর ব্যানারে বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতির কাছে একটি স্মারকলিপি প্রদানের জন্য সুপ্রিম কোর্টে আগমন করলে সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল ওই স্মারকলিপি গ্রহণ করেন।
স্মারকলিপিতে গুমের শিকার হওয়া ব্যক্তিদের স্বজন ও তাদের পরিবারের সদস্যদের আর্থিক ও মানসিক দুর্দশার বিবরণের পাশাপাশি গুমের অপরাধ সংঘটনকারী ব্যক্তিদের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বিচারের ব্যবস্থা গ্রহণ, গুমের শিকার পরিবারকে আর্থিক ক্ষতিপূরণের নির্দেশ প্রদান, সরকারি খরচে মামলা পরিচালনার সুযোগ প্রদান, গুম হওয়া ব্যক্তির সন্ধান না পাওয়া গেলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির সম্পত্তি বিক্রয় বা হস্তান্তরের নিমিত্ত বিশেষ সনদ প্রদানসহ মোট ৮টি (আট) বিষয়ে প্রধান বিচারপতির সহযোগিতা কামনা করা হয়।
এছাড়া গুম পরিবারের সদস্যদের প্রধান সমন্বয়ক মো. বেল্লাল হোসেন স্বাক্ষরিত এ স্মারকলিপিতে বিভিন্ন সময়ে গুম হওয়া মোট ৬৪ (চৌষট্টি) জন ব্যক্তির ছবি ও নাম, ঠিকানা সম্বলিত একটি তালিকা সংযুক্ত রয়েছে।
গত ২৭ আগস্ট মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ প্রজ্ঞাপনমূলে হাইকোর্ট বিভাগের সাবেক বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরীর সভাপতিত্বে দেশের আইন প্রয়োগ ও বলবৎকারী সংস্থার সদস্য কর্তৃক গুম হওয়া ব্যক্তিদের সন্ধানে ৫ (পাঁচ) সদস্য বিশিষ্ট একটি কমিশন গঠন করা হয়। ওই প্রজ্ঞাপনে কমিশনের কর্মপরিধি হিসেবে গুম হওয়া ব্যক্তিদের সন্ধান ও তাদের শনাক্ত করা এবং কি পরিস্থিতিতে তাদের গুম করা হয়েছিল তা নির্ধারণ করা, গুমের ঘটনাগুলোর বিবরণ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে দাখিল করা এবং এ বিষয়ে সুপারিশ প্রদান করাসহ গুম হওয়া ব্যক্তির সন্ধান পাওয়া গেলে তাদের আত্মীয়-স্বজনদের অবহিত করার বিষয়গুলো উল্লেখ করা হয়েছে।
যেহেতু ওই স্মারকলিপির সঙ্গে সংযুক্ত গুম হওয়া ব্যক্তিদের তালিকাসহ স্মারকলিপিতে বর্ণিত বিষয়গুলো এ সংক্রান্তে গঠিত কমিশনের তদন্ত কার্যে সহায়ক হতে পারে এবং কমিশনের কার্যপরিধিতে গুমের বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে কমিশন কর্তৃক প্রয়োজনীয় সুপারিশ প্রদানের ক্ষমতা প্রদান করা হয়েছে, তাই বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতি গুম হওয়া ৬৪ (চৌষট্টি) জন ব্যক্তির তালিকা সম্বলিত ওই স্মারকলিপিটি জোরপূর্বক গুম হওয়া ব্যক্তিদের সন্ধানের নিমিত্ত সরকার কর্তৃক গঠিত ৫ (পাঁচ) সদস্য-বিশিষ্ট তদন্ত কমিশনের সভাপতির কাছে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য পাঠানোর নির্দেশনা প্রদান করেন। তারই ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল স্বাক্ষরিত একটি পত্রে বর্ণিত স্মারকলিপিটি গুম হওয়া ব্যক্তিদের সন্ধানে গঠিত তদন্ত কমিশনে পাঠানো হয়েছে।