10:45 pm, Tuesday, 3 December 2024

সন্তান প্রতিপালনে ইসলামের নির্দেশনা

  • Reporter Name
  • Update Time : 07:04:59 am, Thursday, 12 September 2024
  • 8 Time View

সাবালক হওয়ার আগ পর্যন্ত সন্তানের ভরণ-পোষণের দায়িত্ব বাবার। মৌলিক ভরণ-পোষণ ও উপহার-অনুদানের ক্ষেত্রে সন্তানের মধ্যে ভারসাম্য রক্ষা করা ওয়াজিব। এ ক্ষেত্রে সন্তানদের ভেতরে বৈষম্য করা গুরুতর পাপ। বিখ্যাত সাহাবি নোমান বিন বাশির (রা.) বলেন, আমার পিতা আমাকে একটি উপহার দিয়েছিলেন। তখন (আমার মা) আমরা বিনতে রাওয়াহা (রা.) বলেন, আমি ততক্ষণ পর্যন্ত সন্তুষ্ট হবো না, যতক্ষণ পর্যন্ত না আপনি রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে সাক্ষী করবেন। তখন তিনি রাসুলল্লাহ (সা.)-এর কাছে এসে বললেন, হে আল্লাহর রাসুল! আমি আমার স্ত্রী আমরা বিনতে রাওয়াহার ঘরের ছেলেকে একটা উপহার দিয়েছি এবং সে বলল-আমি যেন আপনাকে সাক্ষী রাখি। তিনি বললেন, তুমি তোমার সব ছেলেকে অনুরূপ অনুদান দিয়েছ? নোমান বললেন, না। তখন তিনি বললেন, আল্লাহকে ভয় করো এবং সন্তানদের মধ্যে ইনসাফ প্রতিষ্ঠা করো। তখন তিনি ফিরে যান এবং তার উপহারটি ফিরিয়ে নেন। (সহিহ বুখারি, হাদিস : ২৫৮৭)

ব্যয় নির্বাহের নীতিমালা

দৈনন্দিন জীবনের নানা ব্যয় নির্বাহে ইসলামের নীতিমালা হলো, প্রত্যেক সন্তানকে তার প্রয়োজন অনুসারে দেওয়া হবে। বড় সন্তান ও ছোট সন্তানের খরচ কখনো এক হবে না। যে সন্তান বিশ্ববিদ্যালয় স্তরে পৌঁছেছে তার লেখাপড়ার খরচ এবং যে প্রাথমিক স্তরে পড়ে তার লেখাপড়ার খরচ সমান নয়। আর এই ক্ষেত্রে উভয়ের জন্য সমান ব্যয় করা আবশ্যক নয়। খরচ প্রদানের ক্ষেত্রে তাদের মধ্যে তাদের মিরাসের অধিকার (বা অংশ) অনুপাতে প্রদান করা ওয়াজিব নয়, বরং তাদের প্রয়োজন অনুযায়ী ব্যয় নির্বাহ করা হবে। প্রয়োজন পূরণের পর অতিরিক্ত যা কিছু দেওয়া হবে তা উপহার, দান ও অনুদান হিসেবে গণ্য হবে। উপহার ও অনুদানের ক্ষেত্রে ন্যায্যতা নিশ্চিত করা ওয়াজিব। ধরে নেওয়া যাক, একজনের খাবার, পানীয়, স্কুলের যাতায়াত বাবদ দৈনন্দিন খরচ ১৫০ টাকা। বাবা তাকে আরো ৫০ টাকা দিলেন। তখন এই ৫০ টাকা উপহার। এ ক্ষেত্রে সমতা বিধান করা অনিবার্য। এক সন্তানকে প্রয়োজনের অতিরিক্ত ৫০ টাকা দিলে অন্য সন্তানকেও তা দেওয়া আবশ্যক। প্রয়োজন পূরণের ক্ষেত্রেও ইনসাফের নানা দিক আছে। যেমন একজনের জামা কিনতে এক হাজার টাকা দেওয়া হলো এবং তারই কাছাকাছি বয়সের আরেকজনকে জামা কিনতে ৫০০ টাকা দেওয়া হলো; অথবা একজনকে কলম কিনতে পাঁচ টাকা দেওয়া হলো, অন্যজনকে ১৫ টাকা দেওয়া হলো। এটা ইনসাফের পরিপন্থী। আল্লামা মানসুর বিন ইউনুস বাহুতি (রহ.) বলেন, ‘পিতামাতা এবং অন্য সব আত্মীয়ের ওপর যারা আত্মীয়তারসূত্রে তাদের থেকে মিরাস (উত্তরাধিকার) পায়, তাদের মধ্যে অনুদান (ও উপহার) দেওয়ার ক্ষেত্রে ন্যায্যতা নিশ্চিত করা ওয়াজিব; তিনি সন্তান হোন, পিতা হোন, মা হোন, ভাই হোন, ছেলে হোন, চাচা হোন, চাচাতো ভাই হোন। তবে তুচ্ছ জিনিসের ক্ষেত্রে ওয়াজিব নয়; যেহেতু তুচ্ছ জিনিস ক্ষমারযোগ্য; এতে তেমন প্রভাব পড়ে না…। তবে খরচ ও পোশাকের বিষয়টি ব্যতিক্রম। এ ক্ষেত্রে প্রয়োজন অনুসারে দেওয়া আবশ্যক; সমতা বিধান নয়।’ (কাশশাফুল কিনা : ৩/৩০৯)

কাউকে বিশেষ কিছু দিতে হলে করণীয় বাবা যদি কোনো সন্তানকে বেশি কিছু দিতে চান, তবে তা বৈধ হওয়ার শর্ত হলো-যাকে কম দেওয়া হচ্ছে তার সন্তুষ্টি থাকা। আর সন্তুষ্টি তখনই গ্রহণযোগ্য হবে যখন সে প্রাপ্তবয়স্ক, বিবেকবান ও সুবুদ্ধি সম্পন্ন। অর্থাৎ যে সাবালক সন্তান সম্পদ সুষ্ঠুভাবে খরচ করতে জানে। অপ্রাপ্তবয়স্ক, পাগল ও নির্বোধের অনুমতি ধর্তব্য নয়। আল্লামা মানসুর বিন ইউনুস বাহুতি (রহ.) বলেন, ‘পিতামাতা ও অন্য আত্মীয় যাদের কথা উল্লেখ করা হলো তারা তাদের ওয়ারিশযোগ্য কিছু আত্মীয়কে অন্যান্যের অনুমতি সাপেক্ষে বিশেষ কিছু দিতে পারেন। কেননা বিশেষ কিছু দেওয়া হারাম হওয়ার কারণ হলো এটি শত্রুতা ও আত্মীয়তার সম্পর্কে ফাটল তৈরি করে। অনুমতি দেওয়া হলে তা নাকচ হয়ে যায়। যদি অন্যান্যের অনুমতি ছাড়া কাউকে বিশেষ কিছু দেন কিংবা অন্যান্যের চেয়ে বেশি কিছু দেন তাহলে পূর্বোক্ত কারণে তিনি গুনাহগার হবেন। হেবা (উপহার) দেওয়ার ক্ষেত্রে ধর্তব্য হলো এমন ব্যক্তির পক্ষ থেকে হওয়া, যিনি লেনদেন করার উপযুক্ত। সুতরাং অপ্রাপ্তবয়স্ক, নির্বোধ, দাস প্রমুখের হেবার লেনদেন অন্যান্য লেনদেনের মতো সঠিক নয়।’ (কাশশাফুল কিনা : ৪/২৯৯ ও ৩১০) আল্লাহ সবাইকে সুপথ দান করুন। আমিন।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Popular Post

আমাকে রংপুরের উপদেষ্টা হিসেবে বিবেচনা করুন: ড. ইউনূস

সন্তান প্রতিপালনে ইসলামের নির্দেশনা

Update Time : 07:04:59 am, Thursday, 12 September 2024

সাবালক হওয়ার আগ পর্যন্ত সন্তানের ভরণ-পোষণের দায়িত্ব বাবার। মৌলিক ভরণ-পোষণ ও উপহার-অনুদানের ক্ষেত্রে সন্তানের মধ্যে ভারসাম্য রক্ষা করা ওয়াজিব। এ ক্ষেত্রে সন্তানদের ভেতরে বৈষম্য করা গুরুতর পাপ। বিখ্যাত সাহাবি নোমান বিন বাশির (রা.) বলেন, আমার পিতা আমাকে একটি উপহার দিয়েছিলেন। তখন (আমার মা) আমরা বিনতে রাওয়াহা (রা.) বলেন, আমি ততক্ষণ পর্যন্ত সন্তুষ্ট হবো না, যতক্ষণ পর্যন্ত না আপনি রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে সাক্ষী করবেন। তখন তিনি রাসুলল্লাহ (সা.)-এর কাছে এসে বললেন, হে আল্লাহর রাসুল! আমি আমার স্ত্রী আমরা বিনতে রাওয়াহার ঘরের ছেলেকে একটা উপহার দিয়েছি এবং সে বলল-আমি যেন আপনাকে সাক্ষী রাখি। তিনি বললেন, তুমি তোমার সব ছেলেকে অনুরূপ অনুদান দিয়েছ? নোমান বললেন, না। তখন তিনি বললেন, আল্লাহকে ভয় করো এবং সন্তানদের মধ্যে ইনসাফ প্রতিষ্ঠা করো। তখন তিনি ফিরে যান এবং তার উপহারটি ফিরিয়ে নেন। (সহিহ বুখারি, হাদিস : ২৫৮৭)

ব্যয় নির্বাহের নীতিমালা

দৈনন্দিন জীবনের নানা ব্যয় নির্বাহে ইসলামের নীতিমালা হলো, প্রত্যেক সন্তানকে তার প্রয়োজন অনুসারে দেওয়া হবে। বড় সন্তান ও ছোট সন্তানের খরচ কখনো এক হবে না। যে সন্তান বিশ্ববিদ্যালয় স্তরে পৌঁছেছে তার লেখাপড়ার খরচ এবং যে প্রাথমিক স্তরে পড়ে তার লেখাপড়ার খরচ সমান নয়। আর এই ক্ষেত্রে উভয়ের জন্য সমান ব্যয় করা আবশ্যক নয়। খরচ প্রদানের ক্ষেত্রে তাদের মধ্যে তাদের মিরাসের অধিকার (বা অংশ) অনুপাতে প্রদান করা ওয়াজিব নয়, বরং তাদের প্রয়োজন অনুযায়ী ব্যয় নির্বাহ করা হবে। প্রয়োজন পূরণের পর অতিরিক্ত যা কিছু দেওয়া হবে তা উপহার, দান ও অনুদান হিসেবে গণ্য হবে। উপহার ও অনুদানের ক্ষেত্রে ন্যায্যতা নিশ্চিত করা ওয়াজিব। ধরে নেওয়া যাক, একজনের খাবার, পানীয়, স্কুলের যাতায়াত বাবদ দৈনন্দিন খরচ ১৫০ টাকা। বাবা তাকে আরো ৫০ টাকা দিলেন। তখন এই ৫০ টাকা উপহার। এ ক্ষেত্রে সমতা বিধান করা অনিবার্য। এক সন্তানকে প্রয়োজনের অতিরিক্ত ৫০ টাকা দিলে অন্য সন্তানকেও তা দেওয়া আবশ্যক। প্রয়োজন পূরণের ক্ষেত্রেও ইনসাফের নানা দিক আছে। যেমন একজনের জামা কিনতে এক হাজার টাকা দেওয়া হলো এবং তারই কাছাকাছি বয়সের আরেকজনকে জামা কিনতে ৫০০ টাকা দেওয়া হলো; অথবা একজনকে কলম কিনতে পাঁচ টাকা দেওয়া হলো, অন্যজনকে ১৫ টাকা দেওয়া হলো। এটা ইনসাফের পরিপন্থী। আল্লামা মানসুর বিন ইউনুস বাহুতি (রহ.) বলেন, ‘পিতামাতা এবং অন্য সব আত্মীয়ের ওপর যারা আত্মীয়তারসূত্রে তাদের থেকে মিরাস (উত্তরাধিকার) পায়, তাদের মধ্যে অনুদান (ও উপহার) দেওয়ার ক্ষেত্রে ন্যায্যতা নিশ্চিত করা ওয়াজিব; তিনি সন্তান হোন, পিতা হোন, মা হোন, ভাই হোন, ছেলে হোন, চাচা হোন, চাচাতো ভাই হোন। তবে তুচ্ছ জিনিসের ক্ষেত্রে ওয়াজিব নয়; যেহেতু তুচ্ছ জিনিস ক্ষমারযোগ্য; এতে তেমন প্রভাব পড়ে না…। তবে খরচ ও পোশাকের বিষয়টি ব্যতিক্রম। এ ক্ষেত্রে প্রয়োজন অনুসারে দেওয়া আবশ্যক; সমতা বিধান নয়।’ (কাশশাফুল কিনা : ৩/৩০৯)

কাউকে বিশেষ কিছু দিতে হলে করণীয় বাবা যদি কোনো সন্তানকে বেশি কিছু দিতে চান, তবে তা বৈধ হওয়ার শর্ত হলো-যাকে কম দেওয়া হচ্ছে তার সন্তুষ্টি থাকা। আর সন্তুষ্টি তখনই গ্রহণযোগ্য হবে যখন সে প্রাপ্তবয়স্ক, বিবেকবান ও সুবুদ্ধি সম্পন্ন। অর্থাৎ যে সাবালক সন্তান সম্পদ সুষ্ঠুভাবে খরচ করতে জানে। অপ্রাপ্তবয়স্ক, পাগল ও নির্বোধের অনুমতি ধর্তব্য নয়। আল্লামা মানসুর বিন ইউনুস বাহুতি (রহ.) বলেন, ‘পিতামাতা ও অন্য আত্মীয় যাদের কথা উল্লেখ করা হলো তারা তাদের ওয়ারিশযোগ্য কিছু আত্মীয়কে অন্যান্যের অনুমতি সাপেক্ষে বিশেষ কিছু দিতে পারেন। কেননা বিশেষ কিছু দেওয়া হারাম হওয়ার কারণ হলো এটি শত্রুতা ও আত্মীয়তার সম্পর্কে ফাটল তৈরি করে। অনুমতি দেওয়া হলে তা নাকচ হয়ে যায়। যদি অন্যান্যের অনুমতি ছাড়া কাউকে বিশেষ কিছু দেন কিংবা অন্যান্যের চেয়ে বেশি কিছু দেন তাহলে পূর্বোক্ত কারণে তিনি গুনাহগার হবেন। হেবা (উপহার) দেওয়ার ক্ষেত্রে ধর্তব্য হলো এমন ব্যক্তির পক্ষ থেকে হওয়া, যিনি লেনদেন করার উপযুক্ত। সুতরাং অপ্রাপ্তবয়স্ক, নির্বোধ, দাস প্রমুখের হেবার লেনদেন অন্যান্য লেনদেনের মতো সঠিক নয়।’ (কাশশাফুল কিনা : ৪/২৯৯ ও ৩১০) আল্লাহ সবাইকে সুপথ দান করুন। আমিন।