4:04 pm, Thursday, 21 November 2024

কুসংস্কার থেকে বাঁচতে মহানবী (সা.) এর নির্দেশনা

  • Reporter Name
  • Update Time : 07:05:35 am, Thursday, 12 September 2024
  • 12 Time View

কুসংস্কার হলো নিছক ধারণা ও কল্পনাভিত্তিক প্রমাণহীন বিশ্বাস এবং ওই বিশ্বাস অনুযায়ী ভিত্তিহীন প্রথা ও কর্ম। কোরআন ও সুন্নাহর আলো থেকে বঞ্চিত ব্যক্তিরাই কুসংস্কারে আক্রান্ত। আধুনিক যুগে বহু মানুষ কুসংস্কারের চাদরে আবৃত। কুসংস্কারের বেড়াজাল থেকে বেরিয়ে আসাই ঈমানের দাবি। কারণ নির্ভেজাল ঈমান-আমল ছাড়া মুক্তির কোনো উপায় নেই।

প্রাচীন যুগে কুসংস্কার

প্রাচীন যুগ থেকে মানুষ বিভিন্ন কুসংস্কারে আচ্ছন্ন ছিল। তারা কোনো জিনিস বা বস্তু থেকে কুলক্ষণ গ্রহণ করত। সালিহ (আ.)-এর উম্মত মুমিন ও কাফির দুই দলে বিভক্ত হয়েছিল। কাফির সম্প্রদায় সালিহ (আ.) ও ঈমানদার সঙ্গীদের অশুভ লক্ষণ বলে মনে করত। কোরআনে বর্ণিত হয়েছে, ‘তারা বলল, তোমাকে ও তোমার সঙ্গে যারা আছে তাদের আমরা অমঙ্গলের কারণ মনে করি। সালিহ বলল, তোমাদের শুভাশুভ আল্লাহর এখতিয়ারে, বস্তুত তোমরা এমন এক সম্প্রদায়, যাদের পরীক্ষা করা হচ্ছে।’ (সুরা : নমল, আয়াত : ৪৭)

একই অভিযোগ ফেরাউন ও তার লোকেরা মুসা (আ.)-এর ব্যাপারে করেছিল। কোরআনে বর্ণিত হয়েছে, ‘যখন তাদের সুখ, শান্তি ও কল্যাণ হতো তখন তারা বলত, এটা আমাদের প্রাপ্য, আর যদি তাদের দুঃখ-দৈন্য ও বিপদ-আপদ হতো তখন তারা ওটাকে মুসা (আ.) ও তার সঙ্গী-সাথিদের মন্দ ভাগ্যের কারণরূপে নিরূপণ করত।’ (সুরা : আরাফ, আয়াত : ১৩১) অন্য আয়াতে আছে, ‘এবং যদি তাদের ওপর কোনো কল্যাণ অবতীর্ণ হয় তাহলে তারা বলে, এটা আল্লাহর নিকট হতে এবং যদি তাদের প্রতি অমঙ্গল নিপতিত হয় তাহলে বলে যে এটা তোমার নিকট থেকে হয়েছে। তুমি বলো! সমস্তই আল্লাহর কাছে হতে হয়।’ (সুরা : নিসা, আয়াত : ৭৮) মহান আল্লাহর একত্ববাদের বাণী প্রচারের কারণে আরো কয়েকজন নবী-রাসুলকে উম্মতের কপাল পোড়া লোকদের থেকে অপয়া বলে আখ্যায়িত করার বর্ণনা পাওয়া যায়।

জাহেলি যুগে কুসংস্কার

জাহেলি যুগে অনেক রকম কুসংস্কার প্রচলিত ছিল। এর মধ্যে একটি হলো মানুষ বিশেষ কোনো কাজ করার সময় বা কোথাও যাত্রাকালে পাখির দিকে লক্ষ করত অথবা ইচ্ছাকৃত পাখি উড়িয়ে দিত। যদি দেখত পাখি ডান দিকে উড়ে গেছে, তাহলে তাকে শুভ লক্ষণ মনে করত এবং কাজটি সম্পন্ন করত। আর যদি বাঁ দিকে উড়ত, তবে অশুভ লক্ষণ মনে করত এবং সে কাজ থেকে বিরত থাকত। ইসলাম এটাকে নিষিদ্ধ করেছে। কেননা শুভ-অশুভ আল্লাহর হাতে। তিনি যেটা ইচ্ছে করেন সেটাই হবে। পাখির ডানে-বাঁয়ে ওড়ার সঙ্গে শুভ-অশুভের কোনো রকম সম্পর্ক নেই। এটা নিঃসন্দেহে কুসংস্কার। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী করিম (সা.) বলেছেন, ‘রোগের মধ্যে (আল্লাহর হুকুম ছাড়া) সংক্রমণ নেই। শুভ-অশুভ লক্ষণ বলে কিছু নেই। প্যাঁচায় কুলক্ষণ নেই এবং সফর মাসে অকল্যাণ নেই।’ (বুখারি, হাদিস: ৫৩৪৬)

কুসংস্কার শিরকের অন্তর্ভুক্ত

আজকাল সমাজে এমন কিছু কুসংস্কারের কথা শোনা যায়, যা শিরক ও কুফরের দিকে নিয়ে যায়। অজ্ঞতা, মূর্খতা ও অন্ধ আনুগত্যের কারণে অনেক মানুষ জ্যোতিষী বা গণকের কাছে গিয়ে শিরক করে বসে। কুসংস্কার পালনকারী ব্যক্তির জন্য সতর্কবাণী উচ্চারণ করা হয়েছে। উম্মতে মুহাম্মদী বহির্ভূত বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে। আবদুল্লাহ বিন মাসউদ (রা.) বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, কুলক্ষণ মনে করা শিরক। আর যে তা মনে করে সে আমাদের দলভুক্ত নয়। তবে আল্লাহ তাআলা ওই বিষয়কে দূর করে দেন তাওয়াক্কুলের মাধ্যমে। (আবু দাউদ, হাদিস : ৩৯১০; ইবনে মাজাহ, হাদিস : ৩৫৩৮)

কুসংস্কারের কাফফারা কুসংস্কারমুক্ত সমাজ গঠিত হলে প্রত্যেক মানুষের ইমান মজবুত হবে। আমলের ফাউন্ডেশন স্থায়ী হবে। কুসংস্কারের কাফফারা প্রসঙ্গে আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি কুলক্ষণের কারণে তার প্রয়োজনীয় কাজ থেকে বিরত থাকে, সে ব্যক্তি শিরক করল। সাহাবারা প্রশ্ন করলেন, হে আল্লাহর রাসুল! এর কাফফারা কী? তিনি বলেন, এ কথা বলা যে ‘আল্লাহুম্মা লা খাইরা ইল্লা খাইরাকা ওয়ালা ত্বয়ারা ইল্লা তাইরাকা ওয়ালা ইলাহা গাইরুকা।’ অর্থাৎ হে আল্লাহ! আপনার মঙ্গল ছাড়া আর কোনো মঙ্গল নেই, আপনার পক্ষ থেকে সুসাব্যস্ত দুর্ভাগ্য ছাড়া আর কোনো দুর্ভাগ্য হতে পারে না এবং আপনি ছাড়া আর কোনো মাবুদ নেই। (মুসনাদে আহমদ, হাদিস : ৭০৪৫)

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

মমতাজ শিরীন ভরসার শোক প্রকাশ

কুসংস্কার থেকে বাঁচতে মহানবী (সা.) এর নির্দেশনা

Update Time : 07:05:35 am, Thursday, 12 September 2024

কুসংস্কার হলো নিছক ধারণা ও কল্পনাভিত্তিক প্রমাণহীন বিশ্বাস এবং ওই বিশ্বাস অনুযায়ী ভিত্তিহীন প্রথা ও কর্ম। কোরআন ও সুন্নাহর আলো থেকে বঞ্চিত ব্যক্তিরাই কুসংস্কারে আক্রান্ত। আধুনিক যুগে বহু মানুষ কুসংস্কারের চাদরে আবৃত। কুসংস্কারের বেড়াজাল থেকে বেরিয়ে আসাই ঈমানের দাবি। কারণ নির্ভেজাল ঈমান-আমল ছাড়া মুক্তির কোনো উপায় নেই।

প্রাচীন যুগে কুসংস্কার

প্রাচীন যুগ থেকে মানুষ বিভিন্ন কুসংস্কারে আচ্ছন্ন ছিল। তারা কোনো জিনিস বা বস্তু থেকে কুলক্ষণ গ্রহণ করত। সালিহ (আ.)-এর উম্মত মুমিন ও কাফির দুই দলে বিভক্ত হয়েছিল। কাফির সম্প্রদায় সালিহ (আ.) ও ঈমানদার সঙ্গীদের অশুভ লক্ষণ বলে মনে করত। কোরআনে বর্ণিত হয়েছে, ‘তারা বলল, তোমাকে ও তোমার সঙ্গে যারা আছে তাদের আমরা অমঙ্গলের কারণ মনে করি। সালিহ বলল, তোমাদের শুভাশুভ আল্লাহর এখতিয়ারে, বস্তুত তোমরা এমন এক সম্প্রদায়, যাদের পরীক্ষা করা হচ্ছে।’ (সুরা : নমল, আয়াত : ৪৭)

একই অভিযোগ ফেরাউন ও তার লোকেরা মুসা (আ.)-এর ব্যাপারে করেছিল। কোরআনে বর্ণিত হয়েছে, ‘যখন তাদের সুখ, শান্তি ও কল্যাণ হতো তখন তারা বলত, এটা আমাদের প্রাপ্য, আর যদি তাদের দুঃখ-দৈন্য ও বিপদ-আপদ হতো তখন তারা ওটাকে মুসা (আ.) ও তার সঙ্গী-সাথিদের মন্দ ভাগ্যের কারণরূপে নিরূপণ করত।’ (সুরা : আরাফ, আয়াত : ১৩১) অন্য আয়াতে আছে, ‘এবং যদি তাদের ওপর কোনো কল্যাণ অবতীর্ণ হয় তাহলে তারা বলে, এটা আল্লাহর নিকট হতে এবং যদি তাদের প্রতি অমঙ্গল নিপতিত হয় তাহলে বলে যে এটা তোমার নিকট থেকে হয়েছে। তুমি বলো! সমস্তই আল্লাহর কাছে হতে হয়।’ (সুরা : নিসা, আয়াত : ৭৮) মহান আল্লাহর একত্ববাদের বাণী প্রচারের কারণে আরো কয়েকজন নবী-রাসুলকে উম্মতের কপাল পোড়া লোকদের থেকে অপয়া বলে আখ্যায়িত করার বর্ণনা পাওয়া যায়।

জাহেলি যুগে কুসংস্কার

জাহেলি যুগে অনেক রকম কুসংস্কার প্রচলিত ছিল। এর মধ্যে একটি হলো মানুষ বিশেষ কোনো কাজ করার সময় বা কোথাও যাত্রাকালে পাখির দিকে লক্ষ করত অথবা ইচ্ছাকৃত পাখি উড়িয়ে দিত। যদি দেখত পাখি ডান দিকে উড়ে গেছে, তাহলে তাকে শুভ লক্ষণ মনে করত এবং কাজটি সম্পন্ন করত। আর যদি বাঁ দিকে উড়ত, তবে অশুভ লক্ষণ মনে করত এবং সে কাজ থেকে বিরত থাকত। ইসলাম এটাকে নিষিদ্ধ করেছে। কেননা শুভ-অশুভ আল্লাহর হাতে। তিনি যেটা ইচ্ছে করেন সেটাই হবে। পাখির ডানে-বাঁয়ে ওড়ার সঙ্গে শুভ-অশুভের কোনো রকম সম্পর্ক নেই। এটা নিঃসন্দেহে কুসংস্কার। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী করিম (সা.) বলেছেন, ‘রোগের মধ্যে (আল্লাহর হুকুম ছাড়া) সংক্রমণ নেই। শুভ-অশুভ লক্ষণ বলে কিছু নেই। প্যাঁচায় কুলক্ষণ নেই এবং সফর মাসে অকল্যাণ নেই।’ (বুখারি, হাদিস: ৫৩৪৬)

কুসংস্কার শিরকের অন্তর্ভুক্ত

আজকাল সমাজে এমন কিছু কুসংস্কারের কথা শোনা যায়, যা শিরক ও কুফরের দিকে নিয়ে যায়। অজ্ঞতা, মূর্খতা ও অন্ধ আনুগত্যের কারণে অনেক মানুষ জ্যোতিষী বা গণকের কাছে গিয়ে শিরক করে বসে। কুসংস্কার পালনকারী ব্যক্তির জন্য সতর্কবাণী উচ্চারণ করা হয়েছে। উম্মতে মুহাম্মদী বহির্ভূত বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে। আবদুল্লাহ বিন মাসউদ (রা.) বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, কুলক্ষণ মনে করা শিরক। আর যে তা মনে করে সে আমাদের দলভুক্ত নয়। তবে আল্লাহ তাআলা ওই বিষয়কে দূর করে দেন তাওয়াক্কুলের মাধ্যমে। (আবু দাউদ, হাদিস : ৩৯১০; ইবনে মাজাহ, হাদিস : ৩৫৩৮)

কুসংস্কারের কাফফারা কুসংস্কারমুক্ত সমাজ গঠিত হলে প্রত্যেক মানুষের ইমান মজবুত হবে। আমলের ফাউন্ডেশন স্থায়ী হবে। কুসংস্কারের কাফফারা প্রসঙ্গে আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি কুলক্ষণের কারণে তার প্রয়োজনীয় কাজ থেকে বিরত থাকে, সে ব্যক্তি শিরক করল। সাহাবারা প্রশ্ন করলেন, হে আল্লাহর রাসুল! এর কাফফারা কী? তিনি বলেন, এ কথা বলা যে ‘আল্লাহুম্মা লা খাইরা ইল্লা খাইরাকা ওয়ালা ত্বয়ারা ইল্লা তাইরাকা ওয়ালা ইলাহা গাইরুকা।’ অর্থাৎ হে আল্লাহ! আপনার মঙ্গল ছাড়া আর কোনো মঙ্গল নেই, আপনার পক্ষ থেকে সুসাব্যস্ত দুর্ভাগ্য ছাড়া আর কোনো দুর্ভাগ্য হতে পারে না এবং আপনি ছাড়া আর কোনো মাবুদ নেই। (মুসনাদে আহমদ, হাদিস : ৭০৪৫)