7:37 pm, Thursday, 21 November 2024

কর্মসংস্থানের অভাবে বেকার হয়ে পড়েছেন বদরগঞ্জের দশ গ্রামের আদিবাসী

  • Reporter Name
  • Update Time : 06:20:30 pm, Saturday, 7 September 2024
  • 19 Time View

আকাশ রহমান, বদরগঞ্জ (রংপুর) প্রতিনিধি

বর্ষা ঋতুর শেষ প্রান্তে এসে অফুরন্ত অবসরে আটকা পড়েছেন বদরগঞ্জ উপজেলার দশ গ্রামের খেটে খাওয়া আদিবাসী নারী পুরুষ।

আমন ধান রোপনের পর থেকে ফসলের মাঠে কোন কাজকর্ম নেই। আশেপাশের নদীনালা খালবিলগুলোতে আগের মত মিলছেনা শামুক ঝিনুক ও দেশীয় জাতের মাছের দেখা। তাই নদীর চরাঞ্চলের কাশবাগান থেকে ফুল ঝাড়ুর সরঞ্জাম কাশফুল সংগ্রহ করে অবসর সময় পার করছেন আদিবাসী নারীরা। আগের দিনে ওই অঞ্চলের আদিবাসীরা অবসর সময়ে বনজঙ্গল থেকে নানা প্রকার জংলি আলু সংগ্রহ এবং নদীনালা থেকে মাছ, কাকড়া শিকার ও শামুক ঝিনুক সংগ্রহ করে জীবিকা নির্বাহ করলেও সময়ের ব্যবধানে বনজঙ্গল উজাড় এবং নদীনালা ভরাট হয়ে যাওয়ার ফলে তাদের খাদ্য তালিকা থেকে বাদ পড়েছে পুষ্টি সমৃদ্ধ ওই সব খাবার। তারা এখন বেঁচে থাকার তাগিদে ছুটছেন বিভিন্ন এনজিও সংস্থার দ্বারে দ্বারে। গতকাল শনিবার উপজেলার লোহানীপাড়া ইউনিয়নে আদিবাসীদের এলাকায় খোঁজখবর নিয়ে দেখা গেছে তাদের জীবনজীবিকার এক বাস্তব চিত্রপট। সেখানকার বৃহত্তর বড়পাড়া, কামারপাড়া, তরফ ডাঙ্গা, পশ্চিমপাড়া, শিমুলঝুড়ি, দিগ্যাপাড়া, ঘোনাপাড়া, লাচুপাড়া, বিলপাড়া ও কোদাল ধোয়া আদিবাসী গ্রামের আশে পাশের এলাকায় মাঠে ঘাটে কোন কাজকর্ম না থাকায় কর্মঠ নারী পুরষরা বেকার হয়ে পড়েছেন। তাই ঘরে বসে ছেলে মেয়ে ও বৃদ্ধ বাবা মায়ের সাথে অবসর সময় পার করতে করতে তাদের খাবার সংকট দেখা দিয়েছে। বছরের এই সময়ে আদিবাসীদের কাজকর্ম ও খাবার সংকট থাকায় তারা দুর্বিসহ জীবন যাপন করলেও বছরের অন্যান্য সময়ে কাজকর্মের ভীড়ে স্বাভাবিক অবস্থায় চলা ফেরা করেন তারা। বর্তমান সময়ে কাজকর্মের অভাবে অনেকের বাড়ীর রান্না ঘরের উনুনে উঠেনা দুই বেলা রান্নার হাঁড়ি। অনেকেই আবার প্রশাসনিক চাপের মুখে

আদি পেশা চুয়ানী মদ ও নেশা জাতীয় দ্রব্যাদী তৈরি বন্ধ করে দিয়ে অতিকষ্টে জীবন যাপন করছেন। অনেক নারীর হাতে কাজকর্ম ও ঘরে খাবার না থাকায় তারা অসামাজিক কর্মকান্ডে জড়িয়ে পড়ছেন। কেহ আবার চরম আর্থিক সংকটে পড়ে বাধ্য হয়ে বিভিন্ন এনজিও থেকে ও মহাজনের কাছ থেকে চড়া সুদের উপর টাকা নিয়ে পরিবার পরিজনকে সুখে রাখার চেষ্টা করছেন। এবিষয়ে লোহানীপাড়ার (পশ্চিমপাড়া) আদিবাসী গ্রামের আঞ্জিলি মরমু (৪৪) ও হোতন মাই (৪৬) বলেন, আমরা সারা বছর ধরে আপনাদের জমিতে কামলা কৃষানের কাজ করি। আমন ধান রোপনের পর শ্রাবন থেকে আশ্বিন মাস পর্যন্ত আমাদের হাতে কোন কাজ থাকেনা। তাই এই অঞ্চলের যমুনেশ্বরী, চিকলী, ঘিরনই ও কাল নদীর চরাঞ্চলের কাশবাগান থেকে কাশ ফুলের গোড়ালী, বোঁটা সংগ্রহ করে ঘরে জমিয়ে রাখি। তারপর দিনাজপুর জেলার ফুলবাড়ী ও পার্বতীপুর এলাকায় বসবাসকারী তরি ও মালি সম্প্রদায়ের লোকজন এসে আমাদের কাছ থেকে অল্প দামে এগুলো কিনে নিয়ে গিয়ে তারা বাহারী রঙ্গের ঝাড়ু তৈরি করে গ্রামগঞ্জে বিক্রি করেন। প্রতিটি ঝাড়ু বিক্রি করা হয় ত্রিশ থেকে চল্লিশ টাকা দরে। এমনকি আমরা নিজেরাও ঝাড়ু তৈরি করে নিজের বাসা বাড়ীতে ব্যবহার করি ও শহরের আত্নীয় স্বজনের বাড়ীতেও পাঠিয়ে দেই। তারা আরো বলেন, ঝাড়ু তৈরি কিংবা বিক্রি করা আমাদের পেশা নয়। আমরা অবসর সময় কাটাতে প্রতিদিন ঝাড়ুর সরঞ্জাম সংগ্রহ করে চলেছি।

লোহানীপাড়া ইউনিয়নের আদিবাসী নেতা আলফ্রেড মিঞ্জি, শ্যামল টুডু ও দিপ্তি মিঞ্জি সাংবাদিকদের বলেন, এই

অঞ্চলের আদিবাসী জনগোষ্ঠির জন্য নানা মুখী কর্মসংস্থানের সযোগ সৃষ্টি করা না হলে আমরা সময়ের সাথে এগিয়ে যেতে পারবো না। আমরা আদিবাসীরা এখনো বৈষম্যের শিকার হয়ে নানা রকম সরকারী সুযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত রয়েছি। আগামীদের সরকার প্রধান আদিবাসী বান্ধব হলে তবেই আমরা শান্তিতে থাকতে পারবো।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

মমতাজ শিরীন ভরসার শোক প্রকাশ

কর্মসংস্থানের অভাবে বেকার হয়ে পড়েছেন বদরগঞ্জের দশ গ্রামের আদিবাসী

Update Time : 06:20:30 pm, Saturday, 7 September 2024

আকাশ রহমান, বদরগঞ্জ (রংপুর) প্রতিনিধি

বর্ষা ঋতুর শেষ প্রান্তে এসে অফুরন্ত অবসরে আটকা পড়েছেন বদরগঞ্জ উপজেলার দশ গ্রামের খেটে খাওয়া আদিবাসী নারী পুরুষ।

আমন ধান রোপনের পর থেকে ফসলের মাঠে কোন কাজকর্ম নেই। আশেপাশের নদীনালা খালবিলগুলোতে আগের মত মিলছেনা শামুক ঝিনুক ও দেশীয় জাতের মাছের দেখা। তাই নদীর চরাঞ্চলের কাশবাগান থেকে ফুল ঝাড়ুর সরঞ্জাম কাশফুল সংগ্রহ করে অবসর সময় পার করছেন আদিবাসী নারীরা। আগের দিনে ওই অঞ্চলের আদিবাসীরা অবসর সময়ে বনজঙ্গল থেকে নানা প্রকার জংলি আলু সংগ্রহ এবং নদীনালা থেকে মাছ, কাকড়া শিকার ও শামুক ঝিনুক সংগ্রহ করে জীবিকা নির্বাহ করলেও সময়ের ব্যবধানে বনজঙ্গল উজাড় এবং নদীনালা ভরাট হয়ে যাওয়ার ফলে তাদের খাদ্য তালিকা থেকে বাদ পড়েছে পুষ্টি সমৃদ্ধ ওই সব খাবার। তারা এখন বেঁচে থাকার তাগিদে ছুটছেন বিভিন্ন এনজিও সংস্থার দ্বারে দ্বারে। গতকাল শনিবার উপজেলার লোহানীপাড়া ইউনিয়নে আদিবাসীদের এলাকায় খোঁজখবর নিয়ে দেখা গেছে তাদের জীবনজীবিকার এক বাস্তব চিত্রপট। সেখানকার বৃহত্তর বড়পাড়া, কামারপাড়া, তরফ ডাঙ্গা, পশ্চিমপাড়া, শিমুলঝুড়ি, দিগ্যাপাড়া, ঘোনাপাড়া, লাচুপাড়া, বিলপাড়া ও কোদাল ধোয়া আদিবাসী গ্রামের আশে পাশের এলাকায় মাঠে ঘাটে কোন কাজকর্ম না থাকায় কর্মঠ নারী পুরষরা বেকার হয়ে পড়েছেন। তাই ঘরে বসে ছেলে মেয়ে ও বৃদ্ধ বাবা মায়ের সাথে অবসর সময় পার করতে করতে তাদের খাবার সংকট দেখা দিয়েছে। বছরের এই সময়ে আদিবাসীদের কাজকর্ম ও খাবার সংকট থাকায় তারা দুর্বিসহ জীবন যাপন করলেও বছরের অন্যান্য সময়ে কাজকর্মের ভীড়ে স্বাভাবিক অবস্থায় চলা ফেরা করেন তারা। বর্তমান সময়ে কাজকর্মের অভাবে অনেকের বাড়ীর রান্না ঘরের উনুনে উঠেনা দুই বেলা রান্নার হাঁড়ি। অনেকেই আবার প্রশাসনিক চাপের মুখে

আদি পেশা চুয়ানী মদ ও নেশা জাতীয় দ্রব্যাদী তৈরি বন্ধ করে দিয়ে অতিকষ্টে জীবন যাপন করছেন। অনেক নারীর হাতে কাজকর্ম ও ঘরে খাবার না থাকায় তারা অসামাজিক কর্মকান্ডে জড়িয়ে পড়ছেন। কেহ আবার চরম আর্থিক সংকটে পড়ে বাধ্য হয়ে বিভিন্ন এনজিও থেকে ও মহাজনের কাছ থেকে চড়া সুদের উপর টাকা নিয়ে পরিবার পরিজনকে সুখে রাখার চেষ্টা করছেন। এবিষয়ে লোহানীপাড়ার (পশ্চিমপাড়া) আদিবাসী গ্রামের আঞ্জিলি মরমু (৪৪) ও হোতন মাই (৪৬) বলেন, আমরা সারা বছর ধরে আপনাদের জমিতে কামলা কৃষানের কাজ করি। আমন ধান রোপনের পর শ্রাবন থেকে আশ্বিন মাস পর্যন্ত আমাদের হাতে কোন কাজ থাকেনা। তাই এই অঞ্চলের যমুনেশ্বরী, চিকলী, ঘিরনই ও কাল নদীর চরাঞ্চলের কাশবাগান থেকে কাশ ফুলের গোড়ালী, বোঁটা সংগ্রহ করে ঘরে জমিয়ে রাখি। তারপর দিনাজপুর জেলার ফুলবাড়ী ও পার্বতীপুর এলাকায় বসবাসকারী তরি ও মালি সম্প্রদায়ের লোকজন এসে আমাদের কাছ থেকে অল্প দামে এগুলো কিনে নিয়ে গিয়ে তারা বাহারী রঙ্গের ঝাড়ু তৈরি করে গ্রামগঞ্জে বিক্রি করেন। প্রতিটি ঝাড়ু বিক্রি করা হয় ত্রিশ থেকে চল্লিশ টাকা দরে। এমনকি আমরা নিজেরাও ঝাড়ু তৈরি করে নিজের বাসা বাড়ীতে ব্যবহার করি ও শহরের আত্নীয় স্বজনের বাড়ীতেও পাঠিয়ে দেই। তারা আরো বলেন, ঝাড়ু তৈরি কিংবা বিক্রি করা আমাদের পেশা নয়। আমরা অবসর সময় কাটাতে প্রতিদিন ঝাড়ুর সরঞ্জাম সংগ্রহ করে চলেছি।

লোহানীপাড়া ইউনিয়নের আদিবাসী নেতা আলফ্রেড মিঞ্জি, শ্যামল টুডু ও দিপ্তি মিঞ্জি সাংবাদিকদের বলেন, এই

অঞ্চলের আদিবাসী জনগোষ্ঠির জন্য নানা মুখী কর্মসংস্থানের সযোগ সৃষ্টি করা না হলে আমরা সময়ের সাথে এগিয়ে যেতে পারবো না। আমরা আদিবাসীরা এখনো বৈষম্যের শিকার হয়ে নানা রকম সরকারী সুযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত রয়েছি। আগামীদের সরকার প্রধান আদিবাসী বান্ধব হলে তবেই আমরা শান্তিতে থাকতে পারবো।